Bengal Fast
বিশ্ব মাঝে বাংলা খবর

পাত্র নিকেতনের লক্ষ্মী আরাধনা, করোনা আবহে শালবনীতে অনাড়ম্বরেই পূজিতা দেবী নীলাম্বরী

নিজস্ব সংবাদদাতা : পশ্চিম মেদিনীপুর দুর্গাপুজোর পর এবার লক্ষ্মীপুজোর আয়োজনে থাবা বসাল করোনা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের প্রসিদ্ধ ‘পাত্র নিকেতন’-এর বহু পুরানো পারিবারিক লক্ষ্মীপুজোতে জৌলুস এবারে অনেকটা কম। শুধু আড়ম্বরই কমছে তা নয়, আসেননি দূরদূরান্তের আত্মীয়রা। শালবনীর সারসবেদিয়ার এককালের জমিদার ‘পাত্র বাড়ি’তে লক্ষ্মীপুজো হয়ে আসছে প্রায় দুই শতকের কাছাকাছি। যেখানে পারিবারিক প্রথা ও ঐতিহ্য মেনে আরাধনা করা হয় ধনদেবীর। পুজো উপলক্ষে চলে দেদার জাকজমক। রঙচটা দালানে পড়ে নতুন রঙের ছোঁয়া, ঝাড়বাতি আর রকমারি আলোর রোশনাইয়ের ঝলকানিতে গোটা গ্রামজুড়ে শুরু হয় আনন্দ উৎসব। বসে যাত্রার আসর, চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কিন্তু করোনার কারণে এবার সেই বনেদি বাড়ির লক্ষ্মীপুজোও ফিকে হয়ে উঠেছে।

শালবনীর পাত্রাবাড়ির দেবী নীলাম্বরী

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনীর সারসবেদিয়া একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। এই গ্রামেই বাস করতেন তদানীন্তন জমিদার তিতুরাম পাত্র। প্রায় দশটি মৌজার কয়েক শত বিঘা জমির মালিক ছিলেন এই তিতুরাম৷ কথিত আছে আশ্বিনের এক দুপুরে জমিদার তিতুরাম প্রকৃতির এই অপরূপ শোভা দেখতে বেরিয়েছিলেন একাই। মাঠের অপরূপ শোভা দেখতে দেখতে কখন যে সূর্য মাথার উপর উঠে কিরণ বিকিরণ করছে তা খেয়াল করেননি তিনি। সুর্যের প্রচণ্ড দাবদাহে ক্লান্ত হয়ে পড়েন তিনি৷ ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে একটি গাছের নীচে একটু বিশ্রামের জন্য যান৷ গাছের নীচে যেতেই দেখেন নীল শাড়ি পরিহিতা একটি কন্যা বসে আছেন৷ কৌতূহলী হয়ে তিতুরাম জানতে চান তার নাম কী, কোথায় বাড়ি আর কোথায় যাবে? তিতুরামের এই প্রশ্ন শুনেই মেয়েটি জানান যে, তার নাম নীলাম্বরী। সে তার সাথে যেতে চায় কারণ তার অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। কিন্তু যাব বললেই তো আর যাওয়া হয় না।

- Sponsored -

জমিদার কিছুতেই তাঁকে বাড়ি নিয়ে যেতে রাজি নয়। আর নাছোড়বান্দা ওই মেয়েটিও যাবেই জমিদারের সাথে। জমিদার যখন কিছুতেই রাজি হল না। ঠিক তখনই নীল শাড়ি পরিহিতা কন্যা নিজের রূপ পরিবর্তন করে মা লক্ষ্মীর রূপ ধারণ করে জমিদারকে জানান যে, তিনি যেন তার নিজের বাড়িতে আরাধনা করেন, তাতে পরিবারের মঙ্গল হবে৷ আর তিনি পূজিতা হবেন নীলাম্বরী রূপে। এই বলে মা লক্ষ্মী আলোর এক ঝলকানির মধ্য দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যান৷ আলোর ঝলকানিতে জমিদার তিতুরাম আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। পরে নিজের আচ্ছন্ন ভাব কাটিয়ে উঠে দেখেন কেউ কোথাও নেই। তিনি বাড়ি ফিরে আসেন আর মনস্থির করেন এই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিনই তিনি মা লক্ষ্মীর আরাধনা করবেন। জমিদারের দালান বাড়িতেই মায়ের মন্দির নির্মাণ করে মিস্ত্রি ডেকে মায়ের মূর্তি নির্মাণ করে মায়ের পুজো শুরু করেন। তবে মায়ের কথা মতো মাকে নীল শাড়ি পরিয়ে দুই পাশে দুই দাসী রেখে গজের উপরে বসে থাকা মা নীলাম্বরী দেরীর আরাধনা শুরু করেন। সেই থেকে পাত্র বাড়িতে মা লক্ষ্মীকে এখনও নীল শাড়ি পরিহিতা মা নীলাম্বরী রূপেই পুজো করা হয় এখানে।

শালবনীর পাত্র পরিবার

নিয়ম ও নিষ্ঠাভরে মা লক্ষ্মী পূজিতা হয়ে আসছেন বংশপরম্পরায়। বয়সের ভারে কাবু পাত্র পরিবারের এক সদস্য শ্যামসুন্দর পাত্র জানান, ‘চার পুরুষ আগে শুরু করা পুজো এবার ১৮৩ বছরে পদার্পণ করছে। এখনও সেই নিষ্ঠা ও নিয়ম মেনেই মাকে পূজা করা হয়। পূর্ব পুরুষদের নিয়ম মেনে জন্মাষ্টমীর দিন অদূরে তাল পুকুরের মাটি তুলে আনা হয় প্রতিমা নির্মাণের জন্য৷ পুজোতে ঢাক বাজানো হয় না৷ তার পরিবর্তে ঢোল সানাইয়ের নহবতের সুর বাজে৷ পুজোর দিন বাজে না মাইক৷ পুজোর আটদিন পর মায়ের অষ্টমঙ্গলা করা হয়।’

Subscribe to our Whatsapp Group for daily news alerts.


You might also like

- sponsored -

Comments are closed.