কেন চড়া সবজি-মাছের দাম, অন্তর্তদন্তে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য

তরুণ দে
কিষান মাণ্ডিতে ঢ্যাঁড়শ ১০০ টাকা পাল্লা, অথচ খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা প্রতি কেজিতে! শুধু ঢ্যাঁড়শ নয়, অন্যান্য সবজি– এমনকী মাছের ক্ষেত্রেও এক। তবে রাজ্যের অন্যান্য এলাকার তুলনায় হাওড়ার সাঁকরাইল, নলপুর, বাউড়িয়া এমনকী উলুবেড়িয়া, কুলগাছিয়াতেও মাঝে কম টাকায় সবজি, মাছ পাওয়া যাচ্ছিল। তবে ইদানীং সেখানেও একই অবস্থা। কী করে কম দামে সবজি, মাছ বিক্রি করছিলেন ব্যবসায়ীরা। কী কারণেই বা ফের চড়া হয়ে উঠল দাম? বিষয়টি যাচাই করতে গিয়ে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য।
হাওড়া গ্রামীণে সবজি বা মাছ বিক্রেতারা পাইকারী বাজার করেন ধূলাগড় কিংবা কুলগাছিয়া থেকে। ভোর হলেই ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে পড়েন পাইকারী বাজার করতে। পেট্রোল, ডিজেলের খরচ এড়াতে সাইকেল বা ভ্যানে করেই বেরিয়ে পড়তেন ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে। তবে ইদানীং জাতীয় সড়কে তাঁদের আটকে সমস্ত পুঁজির টাকা, মোবাইল, সাইকেল, ভ্যান প্রায় সবই কেড়ে নিচ্ছে কিছু ছিনতাইবাজের দল।
হাওড়ার বাউড়িয়ার বাসিন্দা অমল কর নামে এক সবজি বিক্রেতার কথায়, ‘সাইকেল নিয়ে ধূলাগড় যাচ্ছিলাম। পকেটে আড়াই হাজার টাকা ছিল। পাঁচলা পার হতেই মুখে কাপড় জড়ানো কিছু লোক আমার পথ আটকায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের মধ্যে একজন ছুরি বের করে আমাকে বলে যা আছে দিয়ে দিতে। নিজের এলাকার এরকম পরিস্থিতির সম্মুক্ষীণ হতে হবে কখনও কল্পনাও করতে পারিনি। ভয়ে আমি আড়াই হাজার টাকাই তাদের দিয়ে ঘরে ফিরে আসি।’ এই কথা বলার মাঝেই চোখের কোণে চিক চিক করে উঠল জল। দিন আনা, দিন খাওয়া পরিবারে তিনিই একমাত্র রোজগেরে। কিন্তু একদিনের পুরো পুজিটাই লুট হয়ে গিয়েছিল তাঁর।
শুধু অমল কর নয়, খলিশানি কালীতলার এক সবজি বিক্রেতার অভিজ্ঞতা আরও ভয়ঙ্কর। তিনিও এরকম পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন। কিন্তু প্রথমে ছিনতাইবাজদের কথামতো কিছু দিতে রাজি হননি। অভিযোগ, রীতিমতো জোর করে তাঁর কাছে থাকা ৩ হাজার ২০০ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। শুধু তাই নয়, প্রতিবাদ করার শাস্তিস্বরূপ তাঁর মোবাইল, সাইকেল এমনকী জামা-প্যান্টও খুলে নেওয়া হয়েছিল। নিরুপায় ওই ব্যবসায়ীকে শেষে অন্তর্বাস পরে হেঁটেই বাড়ি ফিরতে হয়েছিল। বিষয়টি প্রশাসনকে কেন জানাননি? উত্তরে তিনি বললেন, ‘ভোরের রাস্তায় কোনও ট্রাফিক গার্ডের দেখা পাওয়া যায় না। পুলিশে জানাতে গেলে সেই রাজাপুর থানায় যেতে হবে। সেখানে যাওয়া মানে একদিনের ব্যবসা চৌপাট। উল্টে যাতায়াতে খরচও হয়ে যাবে বেশ কিছু টাকা।’
ছিনতাইবাজদের হাত থেকে বাঁচতে এখন ছোটখাট সবজি ও মাছ বিক্রেতাদেরও ভাড়া করতে হচ্ছে ছোট পণ্যবাহী গাড়ি। অনেকে আবার পেশাদার সবজিওয়ালাদের দলে যোগ দিয়ে একসঙ্গে যাচ্ছেন পাইকারী বাজার করতে। ডিজেলের দাম এখন ঊর্ধ্বমুখী। ফলে গাড়িবাবদ খরচা পড়ে যাচ্ছে অনেক টাকা। আর সেই টাকাই সাধারণ ক্রেতাদের থেকে বেশি করে তুলে নিচ্ছেন তাঁরা। এটি একটা উদাহরণমাত্র, করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনে এখন রাজ্যের সর্বত্রই এই ধরনের ছবি ফুটে উঠছে। অনেক ক্ষেত্রে অভাবের তাড়নায় স্থানীয় বাসিন্দারাই নেমে পড়েছেন ছিনতাই করতে! পুলিশ-প্রশাসনের হাত থেকে বাঁচতে তারা ভোরবেলার সবজিওয়ালাদেরই টার্গেট করছে বেশি।
Comments are closed.