আমরা করব জয় নিশ্চয়…, করোনা-জয়ীর আত্মকথা
(আলিপুরদুয়ারের অসীম দত্ত। পেশায় সাংবাদিক। গত ২৫ জুলাই কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিজেই পৌঁছে যান হাসপাতালে। পাঁচদিনে করোনা জয় করে ফিরেছেন বাড়িতে। করোনাকে ভয় পায়নি অসীম, করোনা ভয় পেয়েছে ছটফটে অসীমকে।)

অসীম দত্ত
ভগবানের কাছে কৃতজ্ঞ আমাদের ম্যালেরিয়া কিংবা ডেঙ্গি, টাইফয়েডের মতো জ্বর দেয়নি। করোনা নামক একটা সামান্য ভাইরাসজনিত অসুখ হয়েছে। করোনা ভাইরাসের জন্যই মাত্র পাঁচ দিনে আমি সুস্থ হয়ে উঠেছি। আমি হয়তো প্রথম ব্যাক্তি যে মাত্র পাঁচদিনে কোভিড-১৯ হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে সোজা বাড়িতে ফিরে এসেছি। স্বাস্থ্য দফতর থেকে যেদিন আমার করোনা পজিটিভের খবর দিয়ে বলল, ‘আপনি বাড়িতে থাকুন। আমরা আপনাকে নিতে গাড়ি পাঠাচ্ছি।’ আমি বললাম, ‘স্যার গাড়ি পাঠাতে হবে না। আমি হেঁটেই তপসিখাতা চলে যাব।’ স্বাস্থ্য দফতর আমার কথায় গাড়ি পাঠায়নি। তবে চৌপথি পর্যন্ত আমি ব্যাগ নিয়ে হেঁটে গেছিলাম। বাড়ি থেকে চৌপথি যাবার পথে বেশ কিছু বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছিল। তারা আমায় জিজ্ঞেস করেছিল, ‘কোথায় যাচ্ছিস?’ আমি খুব সহজে বলেছিলাম, ‘আমার করোনা পজিটিভ হয়েছে। আমি তপসিখাতায় যাচ্ছি। চিকিৎসা করাতে।’ না, কেউ বিশ্বাস করেনি।
কারণ আমি এই বিষয়টাকে এত হালকা ভাবে নিয়েছিলাম, কেউ বিশ্বাসই করতে চায়নি। আর করোনাকে আমার এই সহজ ভাবে নেওয়াটাই করোনার বিরুদ্ধে আমার প্রথম জয় ছিল। আর সে কারণেই প্রবল কাশি, শ্বাসকষ্ট থাকা সত্বেও মাত্র পাঁচদিনে সুস্থ। আর এই পাঁচদিনে আমি আমার নিজের খেয়াল রাখার পাশাপাশি কোভিড-১৯ হাসপাতালের করোনা আক্রান্ত দুই পুলিশকর্মী-সহ ৭ জনকে একসাথে দেখাশোনা করেছি।
তবে এই করোনার বিরুদ্ধে আমার যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। আমি কোভিড-১৯ হাসপাতাল থেকে নেগেটিভ হয়ে বাড়ি ফিরেছি। তবে বাড়িতে ফিরে আমি ছয় জন পজিটিভের শক্তি ও মনোবল হয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আমার একমাত্র সন্তান, ওম দত্ত (৭), মা কল্পনা দত্ত (৬২), স্ত্রী তানিয়া দত্ত (২৮), দাদা বাপ্পা দত্ত (৪৫), বউদি সাথী দত্ত (৩৩), ভাইজি সৃজা দত্ত (১৩) সকলেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত। আমরা সকলে একত্রে বাড়িতে থেকেই এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আমরা কেউ ভেঙে পড়িনি। আমরা ‘করোনা’ শব্দটাকে ডিলিট করে দিয়েছি। আমরা একটা জ্বরের বিরুদ্ধে লড়াই করছি।
এই ভাইরাসের জ্বর অতি সাধারণ মানের। বৃষ্টিতে ভিজলেও গা, হাত, পা ব্যাথা হয়। জ্বর হয়, গলা ব্যাথাও হয়। এই ভাইরাসের আক্রমণেও তাই হয়। ভগবানের কৃপায় আমাদের পরিবারের কারও মনে একবারের জন্য মনে হয়নি আমাদের ‘করোনা’ হয়েছে। তাই আমরা সবাই এখনও সুস্থ। আশাকরি সবাই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। আমি নেগেটিভ হয়ে বাড়ি এসেছিলাম। এখন জানি না আমার রিপোর্ট কী হবে? তবে রিপোর্ট যাই হোক না কেন? আমাদের মনের জোর ইস্পাতের মতো। পারমাণবিক বোম কিচ্ছু করতে পারবে না। আর এক সাধারণ জ্বর!
https://www.facebook.com/dooarsdarpan2020/posts/149918776735071
তবে একটা কথা করোনা আক্রান্তদের কেউ অবজ্ঞার চোখে দেখবেন না। আক্রান্তদের প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন। তাদের অচ্ছুৎ মনে করবেন না। ভগবান না করে আগামিকাল আপনি আক্রান্ত না হয়ে পড়েন।
অগণিত শুভানুধ্যায়ী মানুষের অকুণ্ঠিত ভালোবাসায় আমাদের গোটা পরিবার এখনও সুস্থ। আমি অসীম দত্ত আপনাদের অকৃত্রিম ভালোবাসাকে নতমস্তকে প্রণাম জানাই।
কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে ভেঙে পড়বেন না। মানসিক ভাবে লড়াই করবেন। আপনার মানসিক শক্তিই করোনার বিরুদ্ধে আপনার প্রথম জয়।
একটা কথা মনে রাখতে হবে, অনেক মানুষ আছেন যাঁদের মানসিক শক্তির কাছে বিষধর সাপের বিষ হার মানে। আবার অনেক মানুষ আছেন নির্বিষ সাপের কামড়েও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। করোনা এক নির্বিষ সাপ। সুতরাং ভয়ের কিচ্ছু নেই।
‘আমরা করব জয় নিশ্চয়…’।
Comments are closed.