৭৯-তেই থামলেন ‘ছোড়দা’, বাংলার রাজনীতিতে মহীরুহ পতন

নিজস্ব সংবাদদাতা : প্রয়াত হলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। বুধবার গভীর রাতে দক্ষিণ কলকাতায় এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরে হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন এই বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা। চিকিৎসা চলছিল নয়াদিল্লির এইমস (AIIMS)-র পর্যবেক্ষণেই। ২১ জুলাই শারীরিক সমস্যা হওয়ায় এবং পুরনো পেসমেকার বদল করার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন দক্ষিণ কলকাতার বেলভিউ-তে। রক্তে ক্রিয়েটিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় আইসিইউতে। জ্বর-সর্দি থাকায় করোনা পরীক্ষা করা হলে রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। বুধবার হাসপাতালে তিনি হাঁটাচলা করেছিলেন। পরিজন ও শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। কিন্তু ৯ দিনের মাথায় জীবনযুদ্ধে হার মানলেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ। তাঁর মৃত্যুতে বাংলার রাজনীতিতে একটা অধ্যায়ের সমাপন হল।
WBPCC President Somen Mitra has breathed his last, a short while ago. As we struggle to come to terms with this immense loss, all our prayers and thoughts are with Dada’s family.
May his soul rest in peace 🙏 pic.twitter.com/6T207fyt2A
— West Bengal Congress (@INCWestBengal) July 29, 2020
প্রদেশ সভাপতি সোমেন মিত্রের মৃত্যুর খবর রাত ২.৫১ মিনিটে ট্যুইট করে জানায় প্রদেশ কংগ্রেস। খবর পেয়ে রাজনৈতিক মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। শোকপ্রকাশ করেছেন দীর্ঘদিনর সহকর্মী তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, লোকসভার বিরোধী দলনেতা ও রাজনৈতিক শিষ্য অধীর চৌধুরী। সমবেদনা জানিয়েছেন পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও ট্যুইট করে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা ব্যক্ত করেছেন।
Saddened to hear about the passing away of veteran leader, former MP and @INCWestBengal president Somen Mitra. My deepest condolences to his family, followers and well-wishers.
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) July 30, 2020
প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বেলভিউ হাসপাতাল থেকে বিধানভবনে আনা হবে সোমেন মিত্রের মরদেহ। বেলা ১২টা পর্যন্ত সেখানেই শায়িত থাকবে প্রবীণ কংগ্রেস নেতার মরদেহ। সাড়ে ১২টায় বিধানসভা হয়ে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে ৩ নং লোয়ার রডন স্ট্রিটের বাসভবনে। সেখান থেকে আদি বাড়ি ৪৫ নম্বর আমহার্স্ট স্ট্রিট। এরপর নিমতলা মহাশ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
All my love and support to family and friends of Somen Mitra at this difficult time. We will remember him with love, fondness and respect. pic.twitter.com/k1muPvycgT
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) July 30, 2020
সোমেন মিত্র কংগ্রেস রাজনীতিতে আমহার্স্ট স্ট্রিটের ‘ছোড়দা’ বলেই পরিচিত ছিলেন। ১৯৪১ সালে যশোরে জন্ম সোমেন্দ্রনাথ মিত্রের। রাজনীতির আঙিনায় প্রয়াত বরকত গনিখান চৌধুরীর শিষ্য বলা হত তাঁকে। নয়ের দশকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রর সঙ্গে কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচনে লড়াইয়ের পরেই দল ছাড়েন তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে সাংগঠনিক ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে ১৯৯৮ সালে ইস্তফা দেন সোমেন মিত্র।
১৯৭২ -২০০৯ সাল পর্যন্ত সোমেন মিত্র বিধায়ক ছিলেন শিয়ালদা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে, মাঝে ১৯৭৭ থেকে ‘৮২ এই পর্বটুকু বাদ দিয়ে। মতবিরোধের জেরে কংগ্রেস ছেড়ে ২০০৭-‘০৮ সালে তৈরি করেন প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস। পরে এক সময়ের সহকর্মী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে যোগ দেন তৃণমূলে। ২০০৯-এ ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্র থেকে বামপ্রার্থী শমীক লাহিড়ীকে হারিয়ে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন সোমেনবাবু। পৌঁছে যান রাজ্য রাজনীতি থেকে একেবারে রাজধানীতে লোকসভার সাংসদ হয়ে। পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ২০১৪ সালে সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। ফের যোগ দেন পুরনো দল কংগ্রেসে। দ্বিতীয় বারের জন্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হন ২০১৮ সালে। আমৃত্যু সেই পদেই আসীন ছিলেন সোমেন মিত্র।
Comments are closed.