প্রয়াত প্রবীণ সিপিআইএম নেতা শেখ ইসরাইল
নিজস্ব সংবাদদাতা : অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার রাজনৈতিক জগতে নক্ষত্র পতন। প্রয়াত হলেন অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার বামপন্থী কৃষক আন্দোলনের প্রবীণ প্রাক্তন নেতা ও সিপিআইএম-এর রাজ্য কমিটির প্রাক্তন সদস্য শেখ ইসরাইল। ক্যানসার এবং বার্ধক্যজনিত সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। রবিবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিট নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলার ঘাটাল মহকুমার রাধনগর এলাকার শালিকা গ্রামে নিজের বাসভবনেই তিনি শেষ নিঃশাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। শেখ ইসরাইল রেখে গেলেন স্ত্রী সেলিমা বিবি ও ৫ পুত্র-সহ পরিবারকে। দলের প্রবীণ নেতৃত্ব শেখ ইসরাইলের জীবনাবসানে গভীর শোকজ্ঞাপন করেছেন সিপিআইএমের পলিটব্যুরোর সদস্য বিমান বসু, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সম্পাদক তরুণ রায়, দীপক সরকার-সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
লাল সেলাম,কমরেড শেখ ইসরাইল।তিনি বেঁচে থাকবেন আমাদের স্মৃতিতে।তাঁর গদ্যের ব্যঞ্জনায়; ইউনিফর্মের মতো সাদা ধুতি শার্ট পরা এক দীর্ঘদেহী ওজনদার চেহারায়;কখনো বা কিছু কিছু শিশুসুলভ অযৌক্তিক আবদারে।দীর্ঘ দিন অসুস্থতার অক্ষমতা সত্বেও তাঁর গণশক্তির জন্য লেখা ও পড়াশোনায় কখনো ছেদ পড়েনি। pic.twitter.com/pOCpPtXtdE
— Surjya Kanta Mishra (@mishra_surjya) November 1, 2020
১৯৩৮ সালে তৎকালীন অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার রাধানগর এলাকার শালিকা গ্রামের অত্যন্ত দরিদ্র কৃষক পরিবারে শেখ ইসরাইল জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ ইব্রাহিম ও মাতার নাম হাসিনা খাতুন। ছাত্রাবস্থায় দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে পড়াশোনা করেন তিনি। পড়েছেন মেদিনীপুর কলেজেও। হিন্দিতেও ডিপ্লোমা ডিগ্রি ছিল। পেশাগত জীবনে ঘাটালের একটি হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন। সেই সঙ্গে সুনাম অর্জন করেছিলেন রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক রূপেও।
১৯৬৮-৬৯ সালে রাধানগরে জমির আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজ্যে বামপন্থী আন্দোলনের সংস্পর্শে আসেন শেখ ইসরাইল। কৃষক আন্দোলনের সংগঠক হিসাবে জনপ্রিয়তা তাঁকে নেতৃত্বে উত্তীর্ণ করে। ১৯৭০ সালে সিপিআইএমের সদস্যপদ পান। সেই সময় কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্বদানের জন্য তাঁকে জোতদারদের করা অনেকগুলি মিথ্যা মামলার আসামীও হতে হয়। কিছুদিন আত্মগোপনেও কাটাতে হয়।
রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠার পরে রাজ্যে প্রথম পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১৯৭৮ সালে ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ ইসরাইল। সারা ভারত কৃষকসভার জেলা সভাপতি ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে হন পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষকসভার সহ-সভাপতি। সিপিআইএমের খড়গপুর জেলা সম্মেলন থেকে তিনি পার্টির অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ছিলেন পার্টির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যও। পরে পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য হন। তাঁর শারীরিক অসুস্থতার কারণে পরবর্তীকালে তাঁকে দলীয় কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করতেন। কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠন, আন্দোলন ও সংগ্রাম এবং সাহিত্য নিয়ে অনেক বইও লিখেছেন। মেদিনীপুর জেলার কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাস উপযোগী তথ্যাদি এবং অনেকগুলি কবিতার বই রয়েছে তাঁর। নন্দন ও গণশক্তিতে বিভিন্ন সময়ে তাঁর একাধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বই “মেদিনীপুর জেলার কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাস উপযোগী তথ্যাদি”।
Comments are closed.