বিশ বাঁও জলে সাপুরজি-র ‘সুখবৃষ্টি’ প্রকল্প!
অভিজিৎ বসু
পূর্ব কলকাতার রাজারহাট নিউ টাউনে গড়ে-ওঠা এশিয়ার বৃহত্তম গণ-আবাসন প্রকল্পটিকে ঘিরে নানা মহলে সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত জনৈক সুনীল যাদবের লেখা একটি চিঠিকে ঘিরে। এই চিঠিতে শ্রীযাদব দাবি করেছেন, এই প্রকল্পের অন্তর্গত এক বিপুল পরিমাণ অর্থ সরিয়ে ফেলা হয়েছে, যার ফলস্বরূপ গত প্রায় দু’ বছর প্রকল্পের প্রায় সমস্ত কাজই বন্ধ আছে। শ্রীযাদব চিঠিটি লিখেছেন ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (বর্তমানে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক) এবং এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক-কে।
উল্লেখ্য, ব্যাঙ্কগুলি এই আবাসন প্রকল্পে যুক্ত ছিল গৃহঋণ দেওয়ার জন্যে। মনে করিয়ে দেওয়া ভালো, ২০০৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ন’টি পর্যায়ে প্রায় কুড়ি হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করার কথা সাপুরজিদের। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এখনও অবধি কেবল মাত্র চারটি পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছেন তারা। যদিও অষ্টম পর্যায় অবধি ফ্ল্যাট মালিকদের কাছ থেকে প্রায় ৯৫% অর্থ নিয়ে বসে আছেন তারা! এর মধ্যেই ২০১৯-এ নবম পর্যায়ের লটারিও অনুষ্ঠিত হয়। এবং গত জুন মাসে সফল ব্যাক্তিদের তালিকা তারা তাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করেন। এক্ষেত্রে জানিয়ে রাখা ভালো, লটারিতে অংশ নিতে গেলে এক-একজনকে দেড় লক্ষ টাকা দিতে হয়। ষষ্ঠ এবং সপ্তম পর্যায়ের দু’-একজন ‘সফল’ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল যে ইদানীং বেঙ্গল সাপুরজির অফিসে ফোন করলে নাকি কোনও সদর্থক উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না! তা হলে কি সব মিলিয়ে প্রায় বারো থেকে তেরো হাজার মানুষের সারাজীবনের সঞ্চয় এক চরম অনিশ্চয়তার মুখোমুখি?
যদিও সাপুরজির সুনাম ও আন্তর্জাতিক খ্যাতির কথা ভেবে অনেকেই ভরসা রাখতে চাইছেন এই প্রকল্পে। তবে বেশিরভাগ মানুষই এক চরম হতাশা আর অবসাদে দিন কাটাচ্ছেন। যেহেতু এই প্রকল্পের জমিটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দেওয়া, অনেকেই মনে করছেন অবিলম্বে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত। এখন দেখার, মধ্যবিত্তের স্বপ্নপূরণ না স্বপ্নভঙ্গ— কোন দিকে যায় এশিয়ার এই বৃহত্তম আবাসন প্রকল্পটি।
Comments are closed.