জাম খেলেই কেল্লাফতে
বেঙ্গল ফাস্ট : ‘পাকা জামের মধুর রসে, রঙিন করি মুখ’— পল্লিকবি জসিমউদ্দিনের ‘মামার বাড়ি’ কবিতার কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। কালো রঙের ছোট ফল জামের সঙ্গে আমরা প্রত্যেকেই বেশ পরিচিত। গ্রীষ্মকালীন এই ফলের কোনওটি মিষ্টি আবার কোনওটি হালকা টকও বটে। এর ইংরেজি নাম জাভা পাম (Java Plum)। জামে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে পুষ্ঠিগুণ। ভিটামিন সি, জিংক, কপার, গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ ও ফ্রুকটোজ, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও স্যালিসাইলেট-সহ অসংখ্য উপাদান রয়েছে পল্লিগ্রামের এই ফলে। মূলত জুন আর জুলাই মাসেই সর্বাধিক পাওয়া যায় জাম। তবে আধাপাকা ডাঁসা জাম খাওয়া উচিত নয়। খালি পেটে জাম খাবেন না এবং জাম খাওয়ার পর দুধ খাবেন না। পাকা ফল ভরা পেটে খেলে অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকভাব হতে পারে। এবার দেখে নেওয়া যাক, পুষ্টিগুণে ভরপুর জামের উপকারিতা :
১) রক্ত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে : জামের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানগুলোর মধ্যে আয়রন একটি। আয়রন থাকার ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বেড়ে যায় ফলে রক্ত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। যারা রক্তল্পতা বা অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন তাদের জন্য জাম খুবই ভালো। পাশাপাশি জন্ডিসকে নিরাময় করে এবং বিভিন্ন ধরনের আয়রনঘটিত সমস্যাগুলোর সমাধানে সহায়তা করে।
২) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ : ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জাম ভীষণ উপকারী। শুধু ফল নয়, জাম গাছের পাতা, ডাল, ফলের বিচি সব কিছু দিয়েই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এটি রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে এক চা চামচ জামের বিচির গুঁড়ো খালি পেটে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
৩) ত্বক ফ্রেশ রাখে : জামে রয়েছে অ্যাসট্রিনজেন্ট প্রপার্টি। এর ফলে জাম ত্বক অয়েল ফ্রি রাখে। এছাড়াও অ্যাকনে আর কালো ছোপ দূর হয় জাম খেলে।
৪) দাঁত-মাড়ি সুস্থ রাখে : মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে বিশাল উপকারী। এতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টি থাকার ফলে দাঁত এবং মাড়ি ভালো থাকে।
৫) মরসুমি রোগ থেকে রক্ষা করে : জামে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন-সি থাকার ফলে শরীর ইমিউনিটি বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরকে মরসুমি রোগের থেকে রক্ষা করে জাম।
৬) ওজন নিয়ন্ত্রণ করে : জামে কম পরিমাণে ক্যালোরি থাকে, যা ক্ষতিকর তো নয়ই বরং স্বাস্থ্যসম্মত। তাই যারা ওজন নিয়ে চিন্তায় আছেন এবং নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন, তারা খাদ্য তালিকায় রাখতেই পারেন জাম।
৭) হার্ট ভালো রাখে : জাম রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃৎপিণ্ড ভাল রাখে। এছাড়া শরীরের দূষিত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কমিয়ে দেহের প্রতিটি প্রান্তে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। জাম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।
৮) অরুচি ও বমিভাব : পাকা জাম সৈন্ধব লবণ মাখিয়ে ৩-৪ ঘণ্টা রেখে দিয়ে সেটাকে চটকে কাপড়ের পুঁটলি বেঁধে টানিয়ে রাখলে যে রস ঝরে পড়বে, সেটা ২০-২৫ ফোঁটা প্রয়োজনবোধে এক চা চামচ জলে মিশিয়ে খেতে দিলে পাতলা দাস্ত, অরুচি ও বমিভাব কমে যায়।
৯) ক্যান্সার প্রতিরোধে উপকারী : মানুষের মুখের লালার মধ্যে এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ উৎপাদিত হয়, যা থেকে ব্যাকটেরিয়ার জন্ম নেয়। এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া থেকে মুখে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর জাম মুখের ভেতর উৎপাদিত ক্যান্সারের সহায়ক ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব থেকে দেহকে রক্ষা করে মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জাম লড়াই করে জরায়ু, ডিম্বাশয় ও মলদ্বারের ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও।
১০) সাদা বা রক্ত আমাশয় : জামের কচি পাতার রস ২-৩ চা-চামচ একটু গরম করে ছেঁকে নিয়ে খেলে ২-৩ দিনের মধ্যে সেরে যায়।
১১) বিছানায় মূত্রত্যাগ : এ রোগে শিশু-বৃদ্ধ অনেকেই অসুবিধায় পড়েন এবং অনেক মা-কেও সন্তানের জন্য ভুগতে হয়। এক্ষেত্রে বয়স অনুপাতে ২-৩ চা চামচ জাম পাতার রস ১/২ চা চামচ গাওয়া ঘিয়ে মিশিয়ে প্রতিদিন একবার করে খাওয়ালে এক সপ্তাহের মধ্যে ফল পাওয়া যাবে।
১২) ভ্রূণের বিকাশ : গর্ভবতী হলে জাম খাওয়া নিরাপদ। জামে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এবং একটি ঘন পুষ্টির প্রোফাইল রয়েছে, যা ভ্রূণের সম্পূর্ণ বৃদ্ধি এবং বিকাশ নিশ্চিত করে।
Comments are closed.