সরকার নিযুক্ত ঠিকাদারের খামখেয়ালিতে কোভিড হাসপাতালে কর্মী অসন্তোষ
রূপম চট্টোপাধ্যায়
গত পাঁচ মাস ধরে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতাল কোভিড রোগীদের চিকিৎসা করে আসছে। ইতিমধ্যেই হাজারেরও বেশি রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু সেই হাসপাতালেই সাফাইকর্মী ও নিরাপত্তাকর্মীরা গত চার মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। এই কাজে নিযুক্ত ৪৫ জন অস্থায়ী কর্মীর বেতন দেওয়ার কথা রাজ্য সরকার নিযুক্ত ঠিকাদারের। অভিযোগ ঠিকাদার বিল করে বেতন তুলে নিলেও কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না! অস্থায়ী এই কর্মীদের বেতন মাসিক মাত্র দশ হাজার টাকা। কেউ কেউ কয়েক মাসের বেতন পেয়েছেন, তবে অনেকেই কিছুই পাননি। অথচ আইন অনুযায়ী বেতন মিটিয়ে ঠিকাদারের সরকারের কাছে বিল করে বেতন তুলে নেওয়ার কথা। এক্ষেত্রে বেতন সরকারের কাছ থেকে তুলে নিয়ে বেআইনিভাবে টাকা গচ্ছিত রাখার অভিযোগও উঠছে ঠিকাদরের বিরুদ্ধে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর বেতনের দাবিতে সকাল থেকে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী কোভিড হাসপাতালে সাফাইকর্মীদের একাংশ কাজ বন্ধ করে দেন। পরিষেবা লাটে ওঠে।স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকরাও জানিয়ে দেন, কোভিড ওয়ার্ড পরিস্কার না হলে কাজ করা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে দুপুর ১২টা নাগাদ শ্রমজীবী হাসপাতালে আসেন ডেপুটি সিএমওএইচ-১ জয়রাম হেমব্রম এবং নোডাল অফিসার কোভিড মহঃ ইউনিস। তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে সাফাইকর্মীরা জানান, ‘আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে মাসের শেষে প্রাপ্য বেতনটুকুও না পেলে সংসার চালাব কীভাবে? কেনইবা আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করব?’ সরকারি আধিকারিকরা চলতি মাসে ১৮ তারিখের মধ্যে সবার বেতন মিটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন, এবং প্রতিমাসে ১০ তারিখের মধ্যে বেতন মিটিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করলে সাফাইকর্মীরা কাজে যোগ দেন। শ্রমজীবী হাসপাতালের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে পুরো বিষয়টি জানিয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে চিঠিও দিয়েছে।
কিন্তু সরকারি আধিকারিকরা প্রতিশ্রুতি দিলেও ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০-তে ৪৫ জন সিকিউরিটি ও সাফাইকর্মীর মধ্যে মাত্র বেতন পেয়েছেন মাত্র ১৪ জন। রাতে হাসপাতালের তরফে ডেপুটি সিএমওএইচ-১ জয়রাম হেমব্রমের সাথে যোগাযোগ করলে উনি জানান ঠিকাদারকে ডাকা হলেও ঠিকাদার আসেননি। ফোনে জানান আজ আসতে পারেন। যদিও হাসপাতালের তরফে যাঁরা বেতন পাননি তাঁদের বেতন মিটিয়ে দিয়ে কাজ চালু রাখা হয়েছে।
গত ২১ তারিখ প্রশাসনের উদ্যোগে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী কোভিড-১৯ হাসপাতালে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি সিএমওএইচ-১, জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অ্যাকাউন্টস অফিসার, এসিএমওএইচ, কোভিডের নোডাল অফিসার তথা ডিএমসিএইচও, শ্রীরামপুর থানার আইসি, পিয়ারাপুর পুলিশ আউটপোস্টের ইনচার্জ, শ্রমজীবী কোভিড-১৯ হাসপাতালের সুপারিন্টেনডেন্ট ও অ্যাসিটেন্ট সুপারিন্টেনডেন্ট, শ্রমজীবী হাসপাতালের কার্যকরী সভাপতি ও সহ-সম্পাদক। বৈঠকে ঠিকাদারকেও ডেকে আনা হয়। ঠিকাদার সকলের সামনে স্বীকার করতে বাধ্য হন, তিন মাসের বেতন সরকারের থেকে তুললেও তা যথাসময়ে কর্মীদের দেননি। বাকি বেতনের বিল এখনও করেননি।
অবশেষে চাপের মুখে ঠিকাদার প্রতিশ্রুতি দেন, শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতাল যে সকল কর্মীদের বেতন মিটিয়ে দিয়েছে তা হাসপাতালকে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখের মধ্যে মিটিয়ে দেবেন এবং আগামী মাস থেকে ৩ এবং ৪ তারিখের মধ্যে কর্মীদের বেতন মেটাবেন। কর্মীরাও জানিয়ে দিয়েছেন অন্যথা হলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন। প্রয়োজনে সিএমওএইচ অফিস অভিযান করবেন।
Comments are closed.