Bengal Fast
বিশ্ব মাঝে বাংলা খবর

মা কালীর চার বোন থাকে বাংলার এই গ্রামে!

বীরেন ভট্টাচার্য

বাঙালিসমাজে নানান দেবতা, তারমধ্যে অন্যতম কালী। বঙ্গজীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত মা কালী– যাঁর স্মরণ করে চোর, ডাকাত থেকে শুরু করে পুলিশ-দারোগা। ফলে এহেন এক দেবীকে নিয়ে বাঙালিসমাজে রয়েছে নানান কাহিনি ও লোকাচার। তেমনই এক জায়গা পূর্ব বর্ধমানের মেমারির আমাদপুর গ্রাম। যে গ্রাম পরিচিত কালীর গ্রাম নামে। একসঙ্গে চার বোনকে নিয়ে গ্রামে বাস করেন মা কালী।

বড় কালী, আমাদপুর

সে বহুকাল আগের কথা। জনশ্রুতি, বেহুলা নদীর ওপর দিয়ে বাণিজ্য করতে যেতেন তৎকালীন বণিকরা। সেই সময় দস্যুদের হাতে লুণ্ঠিত হতে হত তাঁদের। সেই বেহুলার তীরে জনমানববর্জিত শ্মশানে বাস করতেন এক তান্ত্রিক সন্ন্যাসী। সেখানেই তিনি কালীপুজো ও সাধনা করতেন। দস্যুদের উৎপাত এবং অত্যাচার থেকে বাঁচতে সেখানে পুজো দিতে শুরু করেন বণিকরাও। সেখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ে মায়ের মাহাত্ম্য। পরে মা কালীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে সেই তান্ত্রিক সাধক পঞ্চমুণ্ডির আসন প্রতিষ্ঠা করে বড়মাকে প্রতিষ্ঠা করেন। শুরু হয় নিত্যপুজো, ভোগারতির ব্যবস্থা। একইভাবে গড়ে ওঠে মেজকালী, সেজকালী, ছোটোকালী, সিদ্ধিকালী-সহ একাধিক কালীমন্দির।

মেজ কালী, আমাদপুর

 

- Sponsored -

বড় ও মেজকালীর মন্দিরে নিত্যপুজোর ব্যবস্থা ছাড়া প্রতি অমাবস্যা, শনি ও মঙ্গলবার বিশেষ পুজো, হোম, মানত পুজো, পাঁঠাবলি হয়। মন্দির দেখভালের দায়িত্বে ট্রাস্ট থাকলেও ভক্তদের মানসিকেই পুজো হয়। সারাবছরই চলে মানসিক পুজো বুকিং। আগে থেকে নাম লিখিয়ে রাখতে হয়। কেউ প্রতিমা গড়ার খরচ, কেউ পুজোর উপকরণ, কেউ সাজসজ্জা, কেউ ভোগ, কেউ আলোকসজ্জা দিয়ে থাকেন। কারণবারি দিয়ে চরণামৃত তৈরি করা হয় এবং পুজো সম্পন্ন হয় কারণবারি (মদ) দিয়েই। বাড়িতে তৈরি করা দেশি বা গ্রামীণ মদ দিয়ে পুজো করা হয় তামসিক পদ্ধতিতে। অমাবস্যা না ছাড়া পর্যন্ত মায়ের পুজো চলে।

সেজ কালী, আমাদপুর

প্রতি বছর বড় ও মেজ কালীর পুজো মণ্ডপে প্রচুর ভক্তের সমাবেশ হয়। লক্ষাধিক মানুষের সমাগমে আমাদপুর গ্রামটি মিলনমেলা হয়ে ওঠে। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোকে ছাপিয়ে এখানে সবাই অপেক্ষা করে থাকে কালীপুজোর। তবে করোনার জন্য এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতিটি মণ্ডপ কন্টেনমেন্ট জোন করা হয়েছে। এছাড়াও মাস্ক ছাড়া বাইরে বেরোনো যাবে না। ফলে অন্যান্যবারের থেকে এবারের পরিস্থিত অনেকটাই আলাদা।

ছোট কালী, আমাদপুর

আমাদপুর গ্রামটিতে একাধিক কালীপুজো হয়। এছাড়া চতুর্দশীতে হয় মহাকাল ভৈরবের পুজো। কমবেশি প্রায় ২০০টি পুজো হয় গোটা আমাদপুর গ্রামে। প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয়স্বজনের ভিড় হয়। বিসর্জনের সময় বড়, মেজ, সেজ ও ছোটোকালীর সঙ্গে সঙ্গেই গ্রামের সমস্ত প্রতিমা একসঙ্গে শোভাযাত্রা করে গ্রাম প্রদক্ষিণ করে। সেই শোভাযাত্রা সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়। গ্রামের রাস্তায় সারারাত জেগে শোভাযাত্রা দেখেন এলাকার মানুষ।

এবারের করোনার কারণে কিছুটা বিষণ্ণ আমাদপুরবাসী। মায়ের কাছে তাদের প্রার্থনা, আগামী বছর দীপাণ্বিতা অমাবস্যার আগেই যেন দেশ করোনামুক্ত হয়ে ওঠে। আবার যেন মিলনেমলায় পরিণত হয় কালীর গ্রাম আমাদপুর।

Subscribe to our Whatsapp Group for daily news alerts.


You might also like

- sponsored -

Comments are closed.