নিট-জয়েন্ট নিয়ে একজোট বিরোধীরা, ভার্চুয়াল বৈঠকে মধ্যমণি সনিয়া-মমতা

শুভাশিস মণ্ডল
করোনা আবহে জয়েন্ট এন্ট্রান্স ও নিট পরীক্ষা স্থগিতের পক্ষে একজোট বিরোধীরা। বিজেপি বিরোধী সবকটি রাজ্যের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য বিরোধী দলগুলি একযোগে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধি-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যৌথ আহ্বানে আজ বুধবার দুপুর আড়াইটেয় অনলাইন বৈঠকে বসছেন।
সর্বভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিক্যালের প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বারবার চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠির মূল সুরটিই ছিল, বর্তমান করোনা আবহে সর্বভারতীয় এই পরীক্ষা হলে ছাত্রছাত্রীদের বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হবে। আপাতত পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরীক্ষা স্থগিত রাখা হোক। এ ব্যাপারে মমতা কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী রমেশ পোখরিয়ালকেও অনুরোধ করেছিলেন।
জয়েন্টের নির্ধারিত পরীক্ষার দিন ধার্য হয়েছিল ১৮ থেকে ২৩ জুলাই এবং নিট পরীক্ষার দিন ঠিক হয়েছিল ২৬ জুলাই। কিন্তু, জুলাই মাসেও দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে ঠিক হয় সেপ্টেম্বরে ১-৬ ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ১৩ সেপ্টেম্বর ডাক্তারি পড়ার প্রবেশিকা পরীক্ষা হবে। সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন ১১ জন ছাত্র ও তাঁদের অভিভাবকরা। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অরুণ মিশ্রের বেঞ্চ সেই আবেদন নাকচ করে জানিয়ে দেয়, “করোনা সংক্রমণের কারণে জীবন থমকে থাকবে না। পরীক্ষা পিছিয়ে দিলে একটা বছর নষ্ট হবে ছাত্রছাত্রীদের। সেকথাই চিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
এরপরই পরীক্ষার বিষয়ে দ্রুততার সঙ্গে এগোতে থাকে কেন্দ্রের মোদি সরকার। সেপ্টেম্বরে ১-৬ ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ১৩ সেপ্টেম্বর ডাক্তারি পড়ার প্রবেশিকা পরীক্ষা জন্য ইতিমধ্যেই অ্যাডমিট কার্ড ওয়েবসাইটে আপলোডও করে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের যুক্তি সাড়ে ৬ লক্ষের বেশি পরীক্ষার্থী অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড করে ফেলেছেন। কোনওমতেই এখন পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। মঙ্গলবার প্রেস বিবৃতি জারি করে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ) জানিয়ে দেয়, সেপ্টেম্বরেই হচ্ছে পরীক্ষা। পরীক্ষা কেন্দ্র সংক্রান্ত নতুন গাইডলাইন প্রকাশ করেছে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি।
এর আগে সনিয়া গান্ধি বিরোধী ঐক্য অটুট রাখার জন্য এক বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে ফোন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সনিয়া বলেন, দেশজুড়ে ফেডারেল স্ট্রাকচার বিপন্ন। রাজ্যগুলির বকেয়া অর্থ না পাওয়া, কেন্দ্রের বিমাতৃসুলভ আচরণ নিয়ে একজোট হওয়া উচিত। মমতা সনিয়ার প্রস্তাবে সায় দিয়ে জানান, এখনই যদি বিরোধিতা করতে হয় তবে জয়েন্ট এন্ট্রান্স ও নিট পরীক্ষা স্থগিতের পক্ষে একজোট হওয়া উচিত বিরোধীদের। করোনা আবহে ছাত্রছাত্রীদের অন্ধকারে ঠেলে দিতে পারে না কেন্দ্র। মমতার কথায় সায় দেন সনিয়া। আজ বুধবার দুপুর আড়াইটেয় ভার্চুয়াল বৈঠক দিয়েই ফের একজোট হচ্ছে বিরোধী দলগুলি।
পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য সর্বোচ্চ আদালতে কেন্দ্রের তরফে আবেদনের আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে গতকাল ফের চিঠি দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে মমতার বক্তব্য, ‘‘ধারাবাহিক ভাবে বলে আসছি, অতিমারীর এই পরিস্থিতি নজিরবিহীন এবং এই সময়ে কারও জীবন বিপন্ন করে তোলার মতো সিদ্ধান্ত আমাদের নেওয়া উচিত নয়। পরিস্থিতির স্পর্শকাতরতা বিবেচনা করে দ্রুত হস্তক্ষেপ দরকার, যাতে পড়ুয়াদের শারীরিক ঝুঁকি না হয় এবং তাদের কেরিয়ারও বিপন্ন না হয়। এখন পরীক্ষা নেওয়া মানে ছাত্রছাত্রীদের বড়সড় ঝুঁকির সামনে ফেলে দেওয়া।’’
Comments are closed.