দশমীর সকালে ঘুম থেকে উঠেই সবাইকে বলুন ‘শুভ বিজয়া দশমী’
চারদিন সাকাররূপে দেবী দুর্গা পূজিত হন ভক্তদের কাছে। দশমীর সকালে দেবী সমস্ত অসুরকে পরাজিত করে দেবতাদের অভয় দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যান। অর্থাৎ দেবতাদের বিজয়দিবস দশমী। হৃদয়সাগরে ভক্তিরসে দেবীকে ডুবিয়ে রেখে শুভ চেতনা নিয়ে আবার এক বৎসরের অপেক্ষাই তো দশমী। বিজয়া দশমীর মাহাত্ম্য নিয়ে নিবিষ্ট আলোচনায় সাংবাদিক বীরেন ভট্টাচার্য।
বীরেন ভট্টাচার্য, নয়াদিল্লি
বাঙালি সমাজে যত কাল বা সময় আছে, তারমধ্যে একটা রাতের দুঃখ সবাইকে একসূত্রে বেঁধে রাখে, সেটা হল নবমীর রাত। এই রাতটা যেন সবার কাছে বড়ই বেদনার। সবারই মন খারাপ। আগের সময়ের অভিজাত বাড়ি থেকে শুরু করে আধুনিককালের কর্পোরেট পুজোর রূপান্তরেও সেই দুঃখের বোঝা কমেনি, বরং বেড়়েছে। তবে নবমীর সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়তেই দশমী নিয়ে সবার মনে একটা প্রশ্ন, দশমীর দিন কখন থেকে ‘শুভ বিজয়া দশমী’ বলা যায়। সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মার্কেণ্ডয় পুরাণ-সহ বিভিন্ন শাস্ত্র, যেখানে দেবী দুর্গার কাহিনি বর্ণিত আছে, সেই সমস্ত শাস্ত্রের পাতা উল্টিয়ে দেখতে হবে প্রথম দিন থেকে পুজোর মাহাত্ম্য, তাহলেই সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে।
ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যায়, কোনও জায়গায় সকালেও পুজো হয়। কথিত আছে, মহিষাসুর স্বর্গরাজ্য জয় করার পর দেবতাদের বিতাড়িত করেন স্বর্গরাজ্য থেকে। স্বর্গ থেকে বিতাড়িত দেবতারা ঋষি ক্যাতায়নের আশ্রমে যান। সেখানে স্মরণ করা হয়, ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরকে। ত্রিদেব সেখানে হাজির হয়ে দেবতাদের কাহিনি শোনেন এবং প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হন। সেখানেই ব্রহ্মার পরামর্শে দেবতারা ফের একবার দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়াকে স্মরণ করেন, এবং জানান এবার দেবী আবির্ভূত হবেন ‘দুর্গা দুর্গতিনাশিনী’ রূপে।
তখন মূর্তি পুজোর প্রচলন ছিল না, সেই জন্য আশ্রমের সামনে বেলগাছে সেই সন্ধ্যায় দেবীর আবাহন হয়, যা পরবর্তীকালে বোধন বলে প্রচলিত হয়। সপ্তমীর সকালে পূব আকাশে আতসী ফুলের মতো আভা সমন্বিত এক মহাতেজী দেবীর আবির্ভাব ঘটলে দেবতা, ঋষিরা তাঁর স্তব-স্তুতি করেন, যা সপ্তমী পুজো। দেবীকে নবদুর্গারূপে আবাহন করা যায়। অষ্টমীর সকালে দেবীকে যুদ্ধাস্ত্র ও অলঙ্কারে সজ্জিত করে তুলে অসুরকুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রেরণ করেন। সন্ধিপুজো অর্থাৎ অষ্টমী-নবমীর সন্ধিক্ষণে (৪৮ মিনিট) প্রবল সংগ্রাম আরম্ভ হয়। এবং দেবী দুর্গা ভয়ঙ্কর মূর্তি ধারণ করেন। নবমীর সকালে দেবী দুর্গার জয় কামনায় দেবতারা ক্যাতায়নী ঋষির আশ্রমে যজ্ঞ করেন। সেই জন্য নবমীর দিন হোম-যজ্ঞ হয়, এবং দশমীর সকালে দেবী সমস্ত অসুরকে পরাজিত করে দেবতাদের অভয় দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যান। অর্থাৎ দেবতাদের বিজয়দিবস দশমী।
আবার দেবীর বরে ঋষি ক্যাতায়নের কন্যা দেবী দুর্গা। সেইজন্য দুর্গার আরেক নাম ক্যাতায়নী। মেয়ে চলে যাওয়ায় দুঃখে কাতর হয়ে ওঠেন ঋষি ক্যাতায়ন। সেই জন্যই মহাশক্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবী দুর্গা আম বাঙালির ঘরের মেয়ে উমা।
ফলে দশমীর সকাল থেকেই দেবতাদের জয় উৎসব (স্থূল অর্থে), অশুভ শক্তির বিনাশ দিবস পালন করুন, উদাত্ত চিত্তে সকালে ঘুম থেকে উঠে সবাইকে বলুন শুভ বিজয়া, শুরু করবেন নিজের বাবা-মাকে দিয়ে। তাছাড়া দেবী দুর্গা নিত্যা, তাঁর আবার বিসর্জন কী? চারদিন সাকাররূপে দেবী দুর্গা পূজিত হন ভক্তদের কাছে। দশমীতে হৃদয়সাগরে ভক্তিরসে দেবীকে ডুবিয়ে রেখে শুভ চেতনা নিয়ে আবার এক বৎসরের অপেক্ষাই তো দশমী। অতএব সকাল থেকেই সবাইকে বলুন বিজয়া দশমী।
ছবি ঋণ : ইন্টারনেট ও লেখক
Comments are closed.