সাত ঘণ্টার বৈঠক নিষ্ফলা, শনিবার ফের বৈঠক কৃষকদের সঙ্গে

বীরেন ভট্টাচার্য, নয়াদিল্লি
কৃষি বিলের বিরুদ্ধে কৃষকদের বিক্ষোভ নিয়ে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সাত ঘণ্টার বৈঠকেও জট কাটল না। শনিবার ফের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসবে কৃষক সংগঠন। এদিনের বৈঠকেও পাস হওয়া কৃষি বিল বাতিল করে নয়া আইনের দাবি তোলা হয়েছে কৃষকদের প্রতিনিধিদের তরফে। এই বৈঠকে কেন্দ্রের কাছে বিশেষ অধিবেশন ডেকে কৃষি বিল বাতিল করে নতুন আইন আনার শেষ সুযোগ ছিল বলে দাবি করেছেন কৃষক সংগঠনের নেতারা। সরকারি সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর কৃষক নেতাদের বলেন ন্যূনতম বিক্রয় মূল্যে “কোনও হস্তক্ষেপ করা হবে না।”
এই নিয়ে চতুর্থবার সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসল কৃষক সংগঠনগুলি। যদিও এদিনের সাত ঘণ্টার বৈঠকেও জট কাটেনি বলেই সূত্রের খবর। কেন্দ্রীয় সরকারের আনা নতুন বিলে যে তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে ন্যূনতম বিক্রয় মূল্য নিয়ে উত্তেজনা চরমে উঠেছে কৃষকদের। চুক্তি চাষ বা সংস্থার কাছে ফসল বিক্রির বিষয়ে ন্যূনতম বিক্রয় মূল্য থাকবে না বলে আশঙ্কা কৃষকদের। এদিনের বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর বলেন, “কৃষকদের আরও আইনি অধিকার দেওয়ার বিষয়টি ভাবনা চিন্তা করছে সরকার। আমরা কৃষকদের আশ্বাস দিয়েছি যে, ন্যূনতম বিক্রয় মূল্য থাকবে।”
সূত্রের খবর, এদিন বৈঠকে কৃষি বিল নিয়ে প্রথমে নিজেদের অবস্থান সরকারকে জানায় কৃষক সংগঠনগুলি। তারপর সে বিষয়ে বক্তব্য রাখে সরকার পক্ষ। বৈঠকে কেন্দ্রের তরফে মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা থাকলেও, তা গ্রহণ না করে নিজেদের আনা খাবার খান কৃষক নেতারা।
বাদল অধিবেশনে আনা কৃষি বিল নিয়ে কঠোর অবস্থানে থাকতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার। তবে অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করে কৃষকদের সঙ্গে একমত হওয়ার চেষ্টায় রয়েছে কেন্দ্র। যেমন, কৃষকদের সব চেয়ে উদ্বেগের ন্যূনতম বিক্রয় মূল্য নিয়ে লিখিত আশ্বাস দেওয়ার ব্যাপারটিও রয়েছে। অন্যদিকে করে কৃষি আইনে বলা হয়েছে, চুক্তি চাষ নিয়ে কোনও সমস্যা হলে, তা মেটাতে জেলাশাসকের কাছে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিষয়টিকে আদালত পর্যন্ত যাওয়ার অধিকার দেওয়া হতে পারে। যদিও সেসবে যে ভবি ভোলার নয়, তা এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন কৃষক সংগঠনের নেতারা। তাঁরা স্পষ্ট জানিয়েছে, শুধু ন্যূনতম বিক্রয় মূল্য নিয়ে লিখিত আশ্বাস দিলেই হবে না, কৃষি বিল প্রত্যাহার করে নতুন আইন আনতে হবে।
দেশ জুড়ে কৃষক বিক্ষোভের ঢেউ আছড়ে পড়েছে। এদিন কৃষকদের সঙ্গে “বিশ্বাসঘাতকতা করার” অভিযোগ তুলে পদ্মবিভূষণ সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছেন পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা শিরোমণি আকালি দলের নেতা প্রকাশ সিং বাদল। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং জানান, তিনি দু পক্ষ কেই বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে কৃষক বিদ্রোহের জেরে বন্ধ দিল্লি-মেরঠ এক্সপ্রেসওয়ে। পঞ্জাব থেকে লাগাতার ট্রাক এবং ট্রাক্টরে চাষিরা দিল্লি রওনা দেওয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নয়ডা-দিল্লি সীমানার চিলা সীমানা বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়াও ৯ নম্বর জাতীয় সড়ক ও বন্ধ করে রাখা হয়েছে। দিল্লির চারটি গুরুত্ত্বপূর্ণ প্রবেশ পথে তাঁবু খাটিয়ে বসে রয়েছেন কৃষকরা। সিংহু, টিক্রী, গাজিপুর, নয়ডাতে কৃষি বিল প্রত্যাহারের দাবিতে ধর্নায় বসে কৃষকরা। আর তার মোকাবিলায় সতর্ক প্রশাসন।
Comments are closed.