Bengal Fast
বিশ্ব মাঝে বাংলা খবর

মাছ নিয়ে আজব গ্রামীণ মেলা

বৃষ্টিস্নাত

কথাতেই আছে ‘মৎস্য ধরিব, খাইব সুখে’। একদিনের জন্য ঠিক সেরকমই হয়ে ওঠে আদিসপ্তগ্রামের কৃষ্ণপুর এলাকা। জায়গাটি কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মস্থান দেবানন্দপুরের কাছাকাছি। এই অঞ্চলে বহু বছর ধরে একটি চমকপ্রদ মাছের মেলা হয়ে আসছে।

এই মৎস্য মেলার পোশাকি নাম উত্তরায়ণ মেলা। প্রতি বছর পয়লা মাঘ ভোরবেলা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে মাছের এই মেলা। কী নেই সেখানে! সে ২০ থেকে ৩০ কিলোর ভেটকি হোক বা ১৫০ কিলোর শংকর মাছ। আবার রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবোস, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প থেকে শুরু করে চিতল, আর, বোয়াল, নাইলন টিকা, ভোলা, মাগুর, নানা জাতের চিংড়ি, মৌরলা, পুঁটি, চেলার পাশাপাশি সামুদ্রিক কাঁকড়ার দেখাও মিলবে।

 

রূপচাঁদা থেকে কাঁচকি, ট্যাংরা, পারশে, বাঁশপাতা, খলসে, ফাসা, ন্যাদোস প্রভৃতি বাংলার নদী ও খালবিলের অচেনা অনেক প্রজাতির মাছ দেখলেই মনে পড়ে যাবে নদীমাতৃক বাংলার হারিয়ে যাওয়া মাছেদের কথা। আবার, এক একসময় এত বিশাল আকারের মাছ এখানে আসে যে কোনও একজনের পক্ষে তা কেনা সম্ভব হয় না। তখন চার-পাঁচ জন মিলে সেই মাছ কিনে বাড়ি ফেরেন।

- Sponsored -

মেলার ইতিহাস প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো। সেই সময়কার সপ্তগ্রামের রাজা ছিলেন হিরণ্যদাস মজুমদার। তাঁর ভাইপো রঘুনাথ দাস গোস্বামী ওডিশার পুরীতে যান। সেখানে তিনি দেখা পান নিত্যানন্দ গোস্বামীর। নিত্যানন্দ তাঁর ওপর খুশি হয়ে একটা কৃষ্ণমূর্তি দান করেন। রঘুনাথ সেই মূর্তি নিয়ে গ্রামে ফিরে এসে এক মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে এই অঞ্চলের নাম হয় কৃষ্ণপুর বা কেষ্টপুর। দিনটি ছিল পয়লা মাঘ।

কৃষ্ণমূর্তি লাভের খবর ছড়িয়ে পড়তেই দলে দলে লোক আসতে থাকে দর্শনের উদ্দেশ্যে। সেইসময় তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য ৭০০ জন বৈষ্ণবের দল এসে হাজির হয় সেখানে। ইলিশ মাছের ঝোল, আমের টক প্রভৃতি অদ্ভুত খাবারের বায়না ধরেন তারা। ভরা শীতে নারায়ণের নাম জপতে জপতে জমিদারের পুকুরে জাল ফেললে উঠে আসে জোড়া ইলিশ। আর পাশের আমবাগান থেকে সেই অসময়েও আম পাওয়া যায়। ঠাকুরের মহিমাতেই সে যাত্রা জমিদারবাড়ির মানরক্ষা হয়েছে বলে তারপর থেকেই সেই থেকে পয়লা মাঘ মন্দিরের পাশে বসে মাছের মেলা।

শুধু মাছের কেনা বেচাই নয়, পাশের আমবাগানে চলে পিকনিকও। দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষই এখানে এসে মাছ কিনে বনভোজনের আয়োজন করে থাকে। সারা অঞ্চল জুড়ে পয়লা মাঘ মানুষের কোলাহলে ভরে ওঠে কৃষ্ণপুর গ্রাম।

ছবি ঋণ : দূরের সাথী, আনন্দবাজার পত্রিকা

Subscribe to our Whatsapp Group for daily news alerts.


You might also like

- sponsored -

Comments are closed.