অর্থের বিনিময়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ভাড়া! প্রতারণার নতুন ফাঁদ জামতাড়া গ্যাঙের
শোভাঞ্জন দাশগুপ্ত
এবার চন্দননগরে জামতাড়া গ্যাং! চন্দননগর শহর ভদ্রেশ্বর বৈদ্যবাটি এবং হুগলির বেশ কিছু অঞ্চলে এই ধরনের জালিয়াতি বর্তমানে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অন্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন। ঘটনায় গ্রেফতার ৩।
চন্দননগরের এক এসবিআই ব্রাঞ্চে বেশ কিছুদিন ধরে কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লক্ষ লক্ষ টাকা জমা পড়ার পর আবার সেই টাকা সরিয়ে ফেলা হচ্ছিল বলে খবর। তাও আবার অনলাইন লেনদনের মাধ্যমে। যেসব অ্যাকাউন্টে সেই অর্থে কোনও লেনদেনই হয় না, সেইসব অ্যাকাউন্টেই বেশি পরিমাণ টাকার লেনদেন নজরে আসে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের। বিষয়টি ব্রাঞ্চ ম্যানেজার পুলিশকে জানান। চন্দননগর পুলিশের এসিপি পদমর্যাদার এক অফিসার ঘটনার তদন্ত শুরু করেন।
পুলিশ কমিশনার হুমায়ূন কবির জানান, ‘এসিপি পলাশ ঢালির নেতৃত্বে চন্দননগর পুলিশের একটি দল তদন্তে নেমে ৩ জনকে গ্রেফতার করে। প্রথমে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের কেওয়াইসি দেখে গ্রাহকদের খোঁজ শুরু করে পুলিশ। কয়েকজন গ্রাহককে পেয়েও যায়। তাদের জেরা করে জানা যায়, মাসিক ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা দিয়ে গ্রাহকদের ব্যাঙ্কের পাশবই, এটিএম নিয়ে নেয় গ্যাঙের লোক। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যে মোবাইল নম্বর লিঙ্ক করা ছিল তা পরিবর্তন করে গ্যাঙের কোনও সদস্যের মোবাইল নম্বর দিয়ে দেওয়া হত। যাতে করে ওটিপি আসলে লেনদেনের কোনও অসুবিধা না হয়। এভাবেই বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করে তদন্তকারীরা। অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকার পর সেই টাকা পাটনার কোনও অ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলা হত। সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে অনলাইন লেনদেনের মাধ্যমে এই সব ভাড়া করা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকানো হয়। পরে সেই টাকা নিজেদের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দেওয়া হয়। কারণ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে কোথায় টাকা যাচ্ছে তা বুঝে ফেলছিল গোয়েন্দারা, তাই এই কৌশল।’
এই কাজের সঙ্গে জামতাড়া গ্যাঙের সাদৃশ্য রয়েছে বলে মনে করছেন চন্দননগর পুলিশ কমিশনার হুমায়ূন কবির। সিপি জানান, ‘সুকৌশলে গরিব মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টকে ব্যাবহার করছে এই গ্যাং। টাকার বিনিময়ে তাদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন অনেকেই। আরবিআই অথবা বিভিন্ন ব্যাঙ্ক বারবার বলছে ব্যাঙ্ক ডিটেলস বা এটিএম কার্ড কারও সঙ্গে শেয়ার না করতে। তারপরেও এই সব ভুল করে চলেছেন অনেকে।
ধৃতদের জেরা করে নিয়ে এই চক্রের সঙ্গে জড়িতদের সন্ধান শুরু করেছে চন্দননগর পুলিশ। এদের কাছ থেকে বেশ কিছু মোবাইল, ডায়েরি, সিমকার্ড, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড এবং বেশকিছু নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
Comments are closed.