করোনা-জয়ীর রাখিবন্ধন শ্রমজীবী হাসপাতালে
নিজস্ব সংবাদদাতা : ২৭ জুন ২০২০। কোভিড-১৯ পজেটিভ হয়ে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন উত্তরপাড়ার বাসিন্দা দেবকুমার দাস। সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরে যান ৬ জুলাই ২০২০। কিন্তু দেবকুমারবাবু ভোলেননি শ্রমজীবী হাসপাতালের সেবা। ভোলেননি সেবিকা ও চিকিৎসকদের। তাই তো সোমবার রাখির দিনে শ্রমজীবী হাসপাতালে এসে সেবিকা ও চিকিৎসকদের সঙ্গে রাখিবন্ধন উৎসব পালন করলেন এই করোনা জয়ী। পাশাপাশি পেট পুরে খাওয়ালেন বিরিয়ানি, চিকেন, ফিশ ফিঙ্গার-সহ নানা পদ। আর তার সঙ্গে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যকীয় জিনিস স্যানিটাইজার, মাস্ক ও সাবান প্রদান করলেন হাসপাতালের কর্মীদের।
রোগী হয়ে এসেছিলেন। চিকিৎসায় সুস্থও হয়েছেন। এরপর তো হাসপাতালে সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। গতানুগতিক জীবনে ঢুকে পড়েন সকলেই। কিন্তু বছর ৪৫-এর দেবকুমার একটু অন্যরকম। ভোলেননি শ্রমজীবী হাসপাতালের সেবা। তাইতো তাহলে কেন রাখিবন্ধন উৎসব পালন করলেন হাসপাতালে এসে? দেবকুমারের উত্তর, ‘স্বাস্থ্যকর্মীদের দিনরাত অক্লান্ত লড়াইয়ের সাক্ষী তিনি। দেখেছেন কীভাবে চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা পিপিই কিট পরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চিকিৎসা করে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের একটু সুরাহা দিতে নিজের ওয়ার্ডের কোনও রোগীকে জল দেওয়া কিংবা চিকিৎসকদের ডাকা এমন কাজও করেছেন দেবকুমার।
তাই যেদিন তিনি হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন, সেদিনই ঠিক করেছিলেন কিছু একটা করবেন এই স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য। ঘটনাচক্রে রাখিবন্ধন উৎসবে শ্রমজীবী হাসপাতালে সমস্ত কর্মীদের হাতে রাখি বেঁধে দিলেন তিনি। স্বাস্থ্যকর্মীরাও রাখি পরিয়ে অভিন্দন জানালেন দেবকুমার দাসকে। সচরাচর এমন দৃশ্য চোখে পড়ে না। শ্রমজীবী হাসপাতালের সহ-সম্পাদক গৌতম সরকার জানাচ্ছেন, ‘‘আসলে রোগীর সঙ্গে চিকিৎসকদের সম্পর্ক ব্যবসায়িক নয়, আত্মিক হওয়া উচিত। এই হাসপাতালের মূলমন্ত্র হল ‘আমাদের স্বাস্থ্য আমরাই গড়ব’।’’ এই বিকল্প চিন্তাভাবনা নিয়েই শ্রমজীবী হাসপাতাল এগিয়ে চলেছে। কোভিড হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাতশো রোগীর চিকিৎসা চলছে এই হাসপাতালে। দেবকুমার দাসের মতো করোনা জয়ীরা জানাচ্ছেন, ‘অযথা আতঙ্কিত না হয়ে দৃঢ় মনে করোনার সঙ্গে লড়াই করতে হবে। তবেই জব্দ হবে এই করোনা দানব।’
Comments are closed.