আমফান বিপর্যয় পরবর্তী জীববৈচিত্রের পুনর্গঠন বিষয়ক সেমিনার
নিজস্ব সংবাদদাতা : আমফান বিপর্যয় পরবর্তী জীববৈচিত্রের পুনর্গঠন বিষয়ক সেমিনারে যোগ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড.অমল কুমার মণ্ডল। করোনার বিপদের মাঝেই গত মে মাসের ২০ তারিখ ঘূর্ণিঝড় আমফানে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায়। প্রাণহানি যেমন হয়েছে, চাষের ব্যাপক ক্ষতিও হয়েছে। প্রচুর গাছপালা নষ্ট হয়েছে। এক দিনের ঝড়েই সুন্দরবনের সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ম্যানগ্রোভ বনভূমির। যা সুন্দরবনের প্রাণরক্ষার জিওনকাঠি। সরকারি হিসেব অনুযায়ী বেশ কয়েক হাজার উদ্ভিদের ক্ষতি হয়েছে।
সুন্দরবন-সহ আমফান প্রভাবিত এলাকার পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতিতে চিন্তিত পরিবেশপ্রেমীরা। তাঁদের আশঙ্কা, আমফান ঘূর্ণিঝড় সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে অনেকাংশে নষ্ট করে দিয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ গাছের চারা রোপণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কিছু পরিকল্পনার কথা সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে। প্রশ্ন উঠছে, ঘূর্ণিঝড়ের আগে সুন্দরবনের পরিবেশের যে ভারসাম্য ছিল, আমফান পরবর্তীতে বনসৃজনের সিদ্ধান্ত সেই ভারসাম্যকে কতটা ফিরিয়ে আনতে পারবে? আমফান বিপর্যয় পরবর্তী এইসব বিষয় নিয়েই রাজ্যে এই প্রথম অনলাইন সেমিনার অনুষ্ঠিত হল চারুচন্দ্র কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের উদ্যোগে। আলোচনার শিরোনাম ‘ক্যান রি-প্ল্যান্টেশন অফ ট্রিজ গিভস সেকেন্ড লিজ অফ লাইফ টু দ্য বায়োডাইভার্সিটি অফ সুন্দরবনস অ্যান্ড কোলকাতা ইন দ্য পোস্ট আমফান সিনারিও? আ ম্যাটার অফ ডিবেট।’
পরিবেশের ভারসাম্য বিষয়ক এই গুরুত্বপূর্ণ মনোগ্রাহী সেমিনারের প্রধান বক্তা ছিলেন সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ ও বনবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অমল কুমার মণ্ডল এবং বটানিক্যাল গার্ডেনের বিজ্ঞানী প্রফেসর বসন্ত কুমার সিংহ। অধ্যাপক অমল কুমার মণ্ডল বলেন, কলকাতা ও সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যকে ফেরাতে গেলে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনার। প্রয়োজন আরও বেশি বৃক্ষরোপণের। বর্তমানে লকডাউন ও করোনা আবহে শহরের দূষণের মাত্রা অনেকটাই কম। কিন্তু লকডাউন ও করোনা পরবর্তীতে জনজীবন স্বাভাবিক হলেই দূষণের মাত্রা বাড়বে। তাই যা কিছু করার এর মাঝেই করে নেওয়া প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন শুধু সরকারের তরফ থেকে ব্যবস্থা নিলেই হবে না, বেসরকারি স্তরে এবং ব্যক্তিগতভাবেও এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে। তিনি তার বক্তব্যে ওড়িশার ভূবনেশ্বরের প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনর্গঠনের উদাহরণ তুলে ধরেন এবং সেখানকার অভিজ্ঞতাকে সুন্দরবন ও কলকাতা এলাকায় কাজে লাগানোর বিষয়ে মতামত দেন। বিজ্ঞানী বসন্ত কুমার সিংহ এ বিষয়ে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরেন অনলাইন আলোচনায় প্রায় ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী, গবেষক ও অধ্যাপক, অধ্যাপিকা যোগ দেন এবং প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন।
Comments are closed.