লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা রয়েছে নির্দিষ্ট স্থানেই, বেড়ে গিয়েছে শুধু মানুষের স্পর্ধা
নারায়ণ দে
না জাতীয় পতাকার এতটুকুও অপমান হয়নি। সেটি যথাস্থানেই রয়েছে। উঁচিয়ে উঠেছে শুধু মানুষের স্পর্ধা।
বিস্কুট শিল্প, গাড়ি শিল্পে দেদার মন্দার পর দেশের অর্থনীতি যখন তলানিতে, ঠিক সেই সময় কোভিড আক্রমণ। লকডাউনে করোনার মারপ্যাচে অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে যেতে হয়েছে ভারতীয় সরকারকে। সেখান থেকে অর্থনৈতিক অবস্থা পুনরুদ্ধার করতে জ্বালানির দাম একমাত্র সম্বল ছিল কেন্দ্রের। তার থেকেও বেড়ে চাল দিল বিজেপি সরকার। কেউ না চাইতেই হঠাৎ করে নিয়ে আনা হল কৃষি বিল।
সংসদে কোনওরকম তর্ক-বিতর্ক ছাড়াই অনেকটা গলার জোরে পাস করানো হয় কৃষি বিল। গতবছর সাতাশে সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের অনুমতিতে সেটি আইনে পরিণত হয়। কিন্তু আন্দোলন শুরু হয়েছিল তারও আগে। যে তিনটি নতুন প্রণয়ন আনা হয়েছে কৃষি আইনে, তা মোটেই কৃষকদের পক্ষে নয়। এমনটা অনেক আগে থেকেই বুঝেছিল কৃষক সংগঠনগুলি। পঞ্জাবে প্রথম বিক্ষোভটি দেখানো হয়েছিল ৯ অগস্ট। তারপর হরিয়ানায়, দিল্লি সীমান্তে।
কয়েক দফায় কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠকে বসেও দাবি আদায় হয়নি। ক্রমেই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে কৃষক আন্দোলনের তেজ। দিল্লিতে ৭০ দিনের আন্দোলনে শতাধিক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তারপরও দমেনি আন্দোলন। বরং সরকার যত অনঢ় হয়েছে, অন্নদাতারা ততই এগিয়ে গিয়েছে। ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে সরকারের সমান্তরাল প্যারেড তারই নিদর্শন। শাহিনবাগ আন্দোলন কীভাবে উৎখাত করা হয়েছে, তা মাথায় রেখেই এবার দ্বিগুণ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল আন্দোলনকারীরা। লালকেল্লায় কৃষক সংগঠনের ঝান্ডা লাগানো হয়েছে ঠিকই, ভারতীয় পতাকার কোনওরকম অসম্মান হয়নি। মেইনস্ট্রিম মিডিয়াগুলি যেভাবে প্রচার করছে, তাতে শাসকদলকে বিশেষভাবে আড়াল করা হচ্ছে। লালকেল্লায় বিক্ষোভকারীরা ঢোকার আগে ও পতাকা লাগানোর পরের মুহূর্তের ছবি দেখলেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।
লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা রয়েছে নির্দিষ্ট স্থানেই। বেড়ে গিয়েছে শুধু মানুষের স্পর্ধা। আর তার জন্য দায়ী এই সরকারই। একচেটিয়া হুলিয়া জারি করে যখন সবকিছু কায়েম করতে চাইছে কেন্দ্র সরকার তাহলে কৃষকরা কেন একগুয়ে মনোভাব ধরে রাখবে না, বলতে পারেন? ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবসে ৩৮২ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবার ‘লালকেল্লা’ প্রকৃত অর্থেই ‘প্রজা’দের দখলে!
_________
মতামত ব্যক্তিগত
Comments are closed.