সুশান্তের মৃত্যুরহস্য : রিয়া, কঙ্গনা এবং আরও কিছু
কেন সুশান্তের সঙ্গে মুভি বাতিল করে দেয় কঙ্গনা রানাওয়াত? সেইদিন কি সুশান্ত সিং 'স্টার' ছিল না বলে মুভি বাতিল করেছিল কঙ্গনা? বলিউডের অনেকেই মনে করেন অঙ্কিতা লোখান্ডে সুশান্তের জীবনে ডিপ্রেসনের জন্য দায়ী। তারপর থেকে সুশান্ত অত্যাধিক নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। সুশান্তের জীবনে অনেক পরে আসে রিয়া চক্রবর্তী। তাঁকে ভিক্টিম বানানোর পিছনে রাজনৈতিক মাথা কাজ করছে নাতো? আজ রিয়া চক্রবর্তী প্রবাসী বাঙালি বলেই ওঁর পিছনে দাঁড়ানোর কেউ নেই?
বেবি চক্রবর্তী
ধোনির বায়োপিক রিলিজের ঠিক পরেই কঙ্গনা রানাওয়াত নিজেই সুশান্ত সিং রাজপুতের সঙ্গে মুভি বাতিল করে দেন। সেই সুশান্ত সিংয়ের পরলোকগমনের পর তাঁর এই প্রতিবাদ…! যে নিজেই কিনা সুশান্ত সিংয়ের সঙ্গে মুভি বাতিল করে! কেন কঙ্গনা রানাওয়াত সুশান্তের সঙ্গে মুভি বাতিল করে দেয়? সেইদিন কি সুশান্ত সিং ‘স্টার’ ছিল না বলে মুভি বাতিল করেছিল কঙ্গনা? বহু বলিউড তারকা মনে করেন SSR-কে নিয়ে যে সিবিআই প্রতিবাদ, সেটা কঙ্গনার নিজের স্বার্থপরতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
https://twitter.com/KanganaTeam/status/1298626255311446022
সুশান্ত সিং জীবিত থাকাকালীন তাঁকে যে সম্মান দেয়নি, তাঁকে একজন স্টার বলে স্বীকারই করেনি বা মনে করেনি– তাঁর পরলোকগমনের পর শুধুমাত্র নিজের পিঠ বাঁচাতেই মিডিয়ার সামনে কঙ্গনা রানাওয়াতের এমন প্রতিক্রিয়া। তাই তো তাড়াহুড়ো করে টেলিভিশন চ্যানেলে হাজির হয়ে যাওয়া! অন্যদিকে জেএনইউতে যখন ছাত্রছাত্রীদের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে তখন কোনও মন্তব্য ছিল না কঙ্গনার! উত্তরপ্রদেশের উন্নাওতে বিজেপি নেতা একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে। সেই নির্যাতিতার কোর্টে সাক্ষী দেওয়ার কথা ছিল। তাঁকে কিনা গাড়ি চাপা দিয়ে মারা হয়েছিল– সেই সব গরিব পরিবারের মেয়েকে নিরাপত্তা দিতে এগিয়ে আসেনি কেন্দ্রীয় সরকার। তখনও কিন্তু চুপ ছিলেন কঙ্গনা!
২০১৬ সালে প্রাক্তন বয়ফ্রেন্ড আদিত্য সুমনকে কঙ্গনা নিজেই বাধ্য করেছিল ড্রাগস নিতে। এমনকী কঙ্গনা রানাওয়াত নিজেও ড্রাগস নিত। বিশেষজ্ঞমহলের অনেকেই মনে করেন শুধুমাত্র প্রেসের সামনে নিজে স্বীকার করেছে বলে মুক্তি দেওয়া হল কঙ্গনাকে! প্রশ্ন উঠছে, বাঙালি তারকা প্রত্যুষা মুখার্জির মৃত্যু ‘আত্মহত্যা’ না ‘হত্যা’? তার বেলায় সিবিআই তদন্ত কই? অনেকে মনে করেন শুধু বাঙালি বলে কেউ-ই প্রতিবাদ করার জন্য এগিয়ে আসেনি! তাহলে কি তাঁরা তারকা ছিল না? না তাঁদের সন্মান ছিল না? তাদের কথা কেন সরকার ভাবিনি?
বহু পুরনো প্রেম অঙ্কিতা লোখান্ডের সঙ্গে সুশান্ত সিং রাজপুতের। নাচের ঝলক থেকে প্রেস কনফারেন্স– সবেতেই একটা সময় অঙ্কিতা-সুশান্ত দু’জনকে এক সঙ্গে দেখা গেছে। এই বছর কয়েকের প্রেম রিয়া চক্রবর্তী সঙ্গে সুশান্তের। এর মাঝে সেই পুরনো প্রেমের আঘাত কি বয়ে বেড়াইনি সুশান্ত সিং রাজপুত? বলিউডের অনেকেই মনে করেন অঙ্কিতা লোখান্ডে সুশান্তের জীবনে ডিপ্রেসনের জন্য দায়ী। তারপর থেকে সুশান্ত অত্যাধিক নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে চেয়েছিলেন সম্পর্কটা ভুলে থাকার জন্য। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসেও। সুশান্ত অঙ্কিতার বাড়ির ইএমআই দিত, হিন্দি জনপ্রিয় মেগা সিরিয়াল ‘পবিত্র রিস্তা’র ডিরেক্টরকে ফোন করে খোঁজ নিত অঙ্কিতার। অঙ্কিতার বিয়ে আর সুশান্তের জীবনে সেই পবিত্র ভালোবাসার আঘাত, মুষড়ে পড়া এসব থেকে ভুলে থাকার জন্য নিজেই বেঁচে নিয়েছিল মাদক দ্রব্য। যা কিনা রিয়া চক্রবর্তী তাঁর জীবনে আসার আগে থেকেই।
নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)-র তরফ থেকে আদালতে রিয়ার যে বয়ান পেশ করা হয় তা সরাসরি বিরোধিতা করেন রিয়া চক্রবর্তী। তিনি জানান, এনসিবি ইচ্ছে মতো বয়ান লিখে তাঁকে দিয়ে জোর করে সই করিয়ে নিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন আজ রিয়া চক্রবর্তী প্রবাসী বাঙালি বলেই ওঁর পিছনে দাঁড়ানোর কেউ নেই। রিয়াকে নিয়ে প্রতিবাদী মিছিল করারও কেউ নেই। ইতিমধ্যে রিয়া চক্রবর্তীর জামিন খারিজ করে দেয় মুম্বই আদালত। এনসিবি রিয়ার বিরুদ্ধে যে মাদক পাচারের অভিযোগে এনেছে, তাতে কত টাকার লেনদেন হত, কী মাদক পাচার হত, কী মাদক (কোন ড্রাগস) পাচার করা হত সে সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত সঠিক কোনও তথ্য পেশ করা হয়নি বলে দাবি করেছেন রিয়ার আইনজীবী। অথচ রিয়ার বিরুদ্ধে মাদক আইনের ২৭(এ) ধারার মামলা দায়ের করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন তিনি।
রহস্য এখানে থেমে নেই। সুশান্তের বোন বাড়িতে আসবে বলে ৮ জুন সুশান্তের বাড়ি ছেড়ে দেয় রিয়া চক্রবর্তী। ৯, ১০, ১১, ১২ এই চার দিন বাড়িতে ছিল সুশান্তের বোন নিতু সিং। নিজের ভাইয়ের শরীর অসুস্থ, তা জেনেও বাড়ি ছেড়ে গেলেন কেন? এই ছোট বোন নিতু সিংই প্রথম দেখেছে ভাই সুশান্ত সিংয়ের দেহটা। কীভাবে এল, কেই-বা খবর দিল বোনকে? নাকি ভাইয়ের সম্পত্তির লোভে জারিত আছে বোন নিতুও? অন্যদিকে সুশান্ত সিংয়ের সাথে তাঁর বাবার সম্পর্কও খুব একটা বেশি ভালো ছিল না। প্রমাণ না হওয়া সত্বেও জনগণই তার আগে থেকে রিয়াকে ভিক্টিম বানিয়ে দিয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, রিয়া চক্রবর্তীকে ভিক্টিম বানানোর পিছনে রাজনৈতিক মাথা কাজ করছে নাতো? উত্তর খুঁজতে নিরপেক্ষ তদন্তের দরকার আছে। তবেই কেসটি পূর্ণতা পাবে। পাশাপাশি সিবিআই আর এনসিবি নিরপেক্ষ বিচার করছে কিনা, তাও নজরে রাখতে হবে? আমাদের দেশে ‘নিরপেক্ষ’ শব্দটাই বদলে গিয়ে পার্টির রং মিশে গেছে। আমরা ভুলে গেছি রিয়া চক্রবর্তী একজন গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক। আগে তাঁর নিজস্বতা বজায় রাখতে হবে। তারপরই তদন্ত প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
বেবি চক্রবর্তী, পরিচালক-অভিনেতা, বলিউড। মতামত ব্যক্তিগত।
ছবি ঋণ : ইন্টারনেট।
Comments are closed.