জঙ্গলরাজ বনাম পকোড়া ভাজা, মোদি রাহুল দ্বৈত যুদ্ধে সরগরম বিহার
বীরেন ভট্টাচার্য
করোনা, লকডাউন, পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে তৈরি হওয়া পরিস্থিতি এবং বিতর্ক, সবকিছুটা সামাল দিয়ে এই প্রথম ভোট বিহারে। এখনও বেশ কিছু জায়গায় করোনা পরিস্থিতির জন্য কনটেনমেন্ট জোন রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিধানসভা নির্বাচন করানো যথেষ্ঠ চ্যালেঞ্জিং কমিশনের পক্ষে। ২৮ অক্টোবর বিহারে প্রথম দফার নির্বাচন মোটামুটিভাবে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হল, তবে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়াল ভালই, যার ভরকেন্দ্র হয়ে উঠল পশ্চিম চম্পারণ এবং পটনা।
এদিন পটনায় সভা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পশ্চিম চম্পারণে রাহুল গান্ধি। তিনটি সভাতেই প্রধানমন্ত্রী মোদি মহাজোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তথা লালুপুত্র তেজস্বী যাদবকে জঙ্গলরাজের যুবরাজ বলে মন্তব্য করে বলেন, “যদি জঙ্গলরাজের প্রবর্তক ক্ষমতায় আসে, তাহলে বিহারে দু’দিক থেকেই হাহাকার নেমে আসবে এই অতিমারীর সময়ে। আপনারা ভাবতে পারছেন, ওরা ক্ষমতায় এলে কোভিড ফান্ডের কী অবস্থা হবে।” শুধুমাত্র জঙ্গলরাজের প্রবর্তক বলেই ক্ষান্ত থাকলেন না প্রধানমন্ত্রী, একইসঙ্গে আরজেডিকে কিডন্যাপিং-এর কপিরাইট দল বলেও তোপ দাগলেন তিনি। রাজ্যের উন্নয়নের ওপর জোর দিয়ে ভোটারদের সতর্কবার্তা দিলেন, “লোভী দৃষ্টিতে যারা কোভিড ফান্ডের দিকে তাকিয়ে, তাদের থেকে সাবধান।” মঞ্চে উপস্থিত থাকা বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকেই আগামী পাঁচ বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রী বলে ঘোষণা করে রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করলেন এবং তার জন্য প্রশংসা করলেন নীতীশ কুমারের।
প্রধানমন্ত্রীর জঙ্গলরাজের অভিযোগ দমন করতে রাহুল গান্ধির হাতিয়ার কর্মসংস্থান। পশ্চিম চম্পারণের নির্বাচনী সভা থেকে পকোড়া ভাজার প্রসঙ্গ তুলে পদ্মে কাঁটা ফোটানোর চেষ্টা করলেন কংগ্রেসের যুবরাজ। হাততালিতে ফেটে পড়া জনতাকে উদ্দেশ্য করে সনিয়া-তনয় বলেন, “আপনারা কি পকোড়া ভেজেছেন? পরেরবার যখন আসবেন, মোদিজি এবং নীতীশজিকে পকোড়া দেবেন।” তাঁর কথায়, “এখন আর প্রধানমন্ত্রী বলেন না যে, ২ কোটি যুবককে চাকরি দিয়েছেন।” রাহুল গান্ধির যুক্তি, “তিনি জানেন, মিথ্যা বলছেন, মানুষও তা জানে। আমি নিশ্চিত তিনি যদি এখানে এসে বলেন, ২ কোটি যুবককে চাকরি দিয়েছি, তাহলে মানুষকে তাঁকে তাড়া করবে।”
এদিনের নির্বাচনী সভায় রাহুল গান্ধি আরও বলেন, সারা দেশের ছোটো ব্যবসায়ী, যুব, কৃষক ও শ্রমিক মোদিজির ওপর ক্ষুদ্ধ এবং বিহারে তা নীতীশ কুমারের ওপর। দ্বারভাঙ্গাতেও সভা করে রাহুল গান্ধি বলেন, “আপনারা নীতীশ কুমারকে ১৫ বছর এবং ৬ বছর নরেন্দ্র মোদিকে দিয়েছেন, তারপরেও বিহার সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য।” এদিন সকালে ট্যুইট করে মহাজোটকে ভোটদানের আহ্বান করেন রাহুল গান্ধি। তা নিয়ে আদর্শ আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি।
লকডাউন পর্বে বিহারে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। রাজ্যের সীমানায় দাঁড়িয়ে থাকা শ্রমিকদের ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, তারপরেও তাঁদের কাজে বহাল করা বা রাজ্যের অন্যান্য পরিষেবা ঠিকমতো না পাওয়া সহ একাধিক ইস্যুতে প্রতিষ্ঠান বিরোধী ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে একদা দেশের রাজনীতির বদল ঘটানোর সাক্ষী থাকা বিহারে। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধেও লকডাউন, কোভিড মোকাবিলা, পরিযায়ী শ্রমিক, অর্থনীতি কর্মসংস্থানের মতো সাধারণ বিষয়গুলি নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তবে সবকিছুর জনমানসে যে প্রতিফলন, তা প্রথম পর্বে ইভিএম বন্দি হয়েছে। ফলাফল ১০ নভেম্বর।
Comments are closed.