Bengal Fast
বিশ্ব মাঝে বাংলা খবর

অভিনেতা মিঠুনদা যখন রাজনীতির ময়দানের ‘বাঙালিবাবু’

বিয়াস বসাক

শনিবার কলকাতা বিমানবন্দরে নেমেই তিনি বলেছিলেন ‘ব্রিগেডে অন্যকিছু হবে’। সেইমতই একুশের নির্বাচনে আগে বাংলাকে বড় চমক দিল বিজেপির ব্রিগেড। ধুতি-পাঞ্জাবি, গলায় উত্তরীয়। একেবারে ধোপদুরস্ত বাঙালির সাজে ব্রিগেডের মঞ্চে বিজেপিতে যোগ দিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। অভিনেতার হাতে দলীয় পতাকা দিয়ে তাঁকে দলে স্বাগত জানান কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও দিলীপ ঘোষ।

মঞ্চে মহাগুরুকে ‘বাংলার ছেলে’ বলে পরিচয় দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মিঠুনও মঞ্চ থেকে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে জনতার উদ্দেশ্যে ছুড়ে দেন নিজের ছবির একের পর এক হিট ডায়লগ। বক্তৃতার পরতে-পরতে বুঝিয়ে দেন তাঁর প্রাক্তন দল তৃণমূল এখন আর মা-মাটি-মানুষের সঙ্গে নেই। একইসঙ্গে ‘বহিরাগত’ তত্ত্ব নিয়ে অভিনেতার হুঁশিয়ারি, ‘বাংলায় থাকা সব মানুষই বাঙালি। যাঁরা এখানে বড়ো হয়েছে তাঁদের এখানকার সব জিনিসে অধিকার আছে। আর সেই অধিকার কেউ ছিনিয়ে নিতে চাইলে আমাদের মতো কিছু মানুষ রুখে দাঁড়াবে।’

চলতি বছরে সরস্বতী পুজোর দিন মিঠুন চক্রবর্তীর মুম্বইয়ের বাসভবনে গিয়েছিলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। যদিও সেদিনের সেই বৈঠককে ‘আধ্যাত্মিক আলোচনা’-র নাম দিয়েছিলেন সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তী। তারপর যত সময় এগিয়েছে, ততই জোরালো হয়েছে জল্পনা। শনিবার কলকাতা বিমানবন্দরে অভিনেতা বলেছিলেন ‘ব্রিগেডে অন্যকিছু হবে’। জল্পনা আরও উসকে দেয় সমাবেশের আগের রাতে অভিনেতার সঙ্গে কৈলাস বিজয়বর্গীয়র সাক্ষাৎ। মিঠুনের সঙ্গে গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক হয়েছে বলে ট্যুইটে জানান বিজেপি নেতা। সেই সব জল্পনায় ইতি টেনে রবিবার বিগ্রেডে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করেন মহাগুরু। বার্তা দেন সর্বদা মানুষের পাশে থাকার।

- Sponsored -

একসময়ে রাজ্যের তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন মিঠুন। পরবর্তীতে দলবদল করে যোগ দেন তৃণমূলে। প্রিয় দিদির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজ্য থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হন। কিন্তু চিটফান্ড বিতর্কের জেরে সময়ের আগেই সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেন অভিনেতা। সেইসঙ্গে কার্যত সন্ন্যাস নেন রাজনীতি থেকেও।

এবার একুশের হাইভোল্টেজ নির্বাচনের আগে নয়া ইনিংস। আবারও রাজনীতির মঞ্চে মহাগুরু। একদিন রাজ্যসভার সাংসদের পদে মনোনয়ন পেশ করে নবান্নে এসে বয়সে ছোট মমতার হাঁটু ছুঁয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন মিঠুন। এদিনও সভামঞ্চে স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েন অভিনেতা। অতীত স্মরণ করে ফিরে যান ছেলেবেলায় কলকাতায় কাটানো দিনগুলিতে। তিনি বলেন, ‘জোড়াবাগান থানার পিছনের সেই অন্ধ গলি থেকে আজ এত বড় মঞ্চে আসতে পেরেছি। পৃথিবীর সবথেকে বৃহৎ গণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী এই মঞ্চে আছেন। এটা স্বপ্ন নয়?’

‘মৃগয়া’ থেকে ‘অন্যায়-অবিচার’। ‘ডিস্কো ড্যান্সার’ থেকে ‘অগ্নিপথ’। হালফিলের ‘ফাটাকেষ্ট’। অভিনয় জীবনেও বারবার লড়াই করে জেতা কোনও প্রতিবাদী চরিত্রেই দেখা গিয়েছে মহাগুরুকে। শুধু তাই নয়, একসময় বাংলার মধ্যবিত্ত পরিবারের এই ছেলেটার ‘দাদাগিরি’ দেখেছে মুম্বই। তিন তিনবার জাতীয় পুরস্কারের পাশাপাশি পেয়েছেন দেশে সর্বোচ্চ আয়করদাতার সম্মান। দুই চিটফান্ড সংস্থাকে ফেরত দিয়েছেন একদা ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে নেওয়া সমস্ত টাকা।

রবিবার ব্রিগেডের মঞ্চেও নিজেকে ‘গর্বিত বাঙালি’ বলে বার্তা দেন মিঠুন। বাংলার ভোট যুদ্ধে বাঙালির ছেলে মিঠুনের উপস্থিতি বিজেপির পাল্লা ভারী করল বলে মনে করেছে গেরুয়া শিবির। সহমত পোষণ করেছে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক মহল। তাই অভিনেতাকে দিয়ে বাংলার শহর-গঞ্জে একাধিক প্রচারের পরিকল্পনাও করে ফেলেছে পদ্মশিবির। এবার বঙ্গ জীবনে পর্দার মিঠুনদা রাজনীতির মিঠুনদা হয়ে বিজেপিকে কতটা সুবিধা দেবে, তা বলবে ভোটের ফলাফল।

Subscribe to our Whatsapp Group for daily news alerts.


You might also like

- sponsored -

Comments are closed.