কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত চরমে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ডাকে দিল্লি যাবেন না মুখ্যসচিব-ডিজি
বীরেন ভট্টাচার্য, নয়াদিল্লি
কেন্দ্রীয় সরকারের চিঠির ১২ ঘণ্টার অর্ধেক সময়ের মধ্যেই রাজ্য প্রশাসনের তরফে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের ডাকে দিল্লি যাবেন না মুখ্যসচিব এবং ডিজি। যেহেতু বিষয়টি ইতিমধ্যেই “খোঁজ নিয়ে দেখা হয়েছে”, ফলে তাঁদের দিল্লি যাওয়ার প্রয়োজন নেই বলে রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে। গতকাল জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনা নিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডিজি বীরেন্দ্রের থেকে রিপোর্ট তলব করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। আজ সকালেই সেই রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, রাজ্যের তরফে জেপি নাড্ডার জন্য কোনও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি। এমনকী, বলুটে প্রুফ গাড়ি ছাড়া অন্য কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছে গেরুয়া শিবিরও।
রাজ্যপালের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেই রাজ্য প্রশাসনের দুই শীর্ষ আমলাকে দিল্লিতে চিঠি দিয়ে ডেকে পাঠান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা। সেই সঙ্গে মুখ্যসচিবকে আলাদা একটি চিঠিও দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের চিঠিতে জানানো হয়, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং জেড ক্যাটাগরির ব্যক্তির ওপর হামলা নিয়ে আলোচনার” জন্য তাঁদের ডেকে পাঠানো হয়েছে। এদিন বিকেলই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লাকে চিঠি লিখে তাঁদের না যাওয়ার কথা জানিয়ে দেন রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে মুখ্যসচিব লেখেন, “আমরা গতকাল তাঁর নিরাপত্তার যথাযথ ব্যবস্থা করেছিলাম।”
জেপি নাড্ডার ওপর হামলা যে সহজভাবে নেওয়া হচ্ছে না, গতকাল রাতেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। একইসঙ্গে টুইট করে নাড্ডার কনভয়ে হামলার নিন্দা করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, কেন্দ্রীয়মন্ত্রী পিযুষ গোয়েল থেকে শুরু করে যোগাী আদিত্যনাথের মতো বিজেপির শীর্ষ নেতারা। আজ সাংবাদিক সম্মেলনে নিজডেদের অবস্থান ব্যাখা করে একে অপরকে তোপ দেগেছে কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসকদল। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে বলা হয়,”জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনা নিয়ে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারমধ্যে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে বিজেপি নেতা রাকেশ সিং এর বিরুদ্ধে, বাকি দুটি মামলা করা হয়েছে অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে।” তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, এভাবে মুখ্যসচিব ও ডিজিকে তলব করতে পারে না কেন্দ্রীয় সরকার। কেন মুখ্যসচিব ও ডিজিকে তলব করা হয়েছে?”
বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায় বলেন, “বাংলায় আইনের কোনও শাসন নেই। নাড্ডাজির জন্য কোনও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি, কোথাও পুলিশ দাঁড়িয়েছিল বলে আমার চোখে পড়েনি।”একইসুরে সুর মিলিয়ে রাজ্য বিজেপির আরেক নেতাও রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তোপ দাগেন। একইসঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “বিজেপিকে সমর্থন করতে হবে না, বা বিজেপির হয়ে কাজ করতে হবে না, তবে তৃণমূল কংগ্রেসের দালালি বন্ধ করুন। ”
একাধিক ঘটনায় রাজভবন-নবান্ন ও কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিকবার সংঘাত বেঁধেছে। তবে এভাবে রাজ্যের মুখ্যসচিব ও ডিজিকে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়নি। ফলে জেপি নাড্ডার ওপর হামলার ঘটনাকে হাতিয়ার করে রাজ্যের শাসকদল ও সরকারের বিরুদ্ধে সুর আরও সপ্তমে চড়াতে চায় গেরুয়া শিবির।
Comments are closed.