জনস্বাস্থ্য পরিকল্পনার অভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি অ্যাসোসিয়েশন ফর হেলথ সার্ভিস ডক্টরের
অভিষেক পাল
রাজ্যের করোনা সংক্রমণ প্রতিদিন দ্রুতগতিতে বাড়ছে। ৯ অগস্ট প্রকাশিত স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, বাংলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৯৩৯ জন। আক্রান্ত বেড়ে হল ৯৫ হাজার ৫৫৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ হাজার ৯৯৬ জন। রাজ্যে মোট সুস্থ হয়েছেন ৬৭ হাজার ১২০ জন। এই মুহূর্তে রাজ্যে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীর সংখ্যা ২৬ হাজার ৩৭৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫৪ জনের। মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৫৯ জন।
সংক্রমণ বৃদ্ধির এহেন পরিস্থতিতে জনস্বাস্থ্য পরিকল্পনার অভাব এবং পরিকাঠামো প্রস্তুতির ঘাটতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিল অ্যাসোসিয়েশন ফর হেলথ সার্ভিস ডক্টর, পশ্চিমবঙ্গ শাখা। সংগঠনের দাবি, রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলেই মনে হয়।
রবিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অ্যাসোসিয়েশন ফর হেলথ সার্ভিস ডক্টর জানিয়েছে, সংগঠনগত ভাবে সাম্প্ৰতিক সময়ে অগস্টের ৩, ৭ এবং ৯ তারিখে, কোভিড যুদ্ধের বেশ কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তারা মুখ্যমন্ত্রীকে পরপর চিঠি লিখেছে। মূলত গঠনমূলক পরামর্শের বিভিন্ন দাবি জানিয়েছে ওই সংগঠন।
মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা সেই চিঠিতে সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারি প্রোফেসর মানস কুমার গুমটা ৯টি বিষয় নিয়ে প্রস্তাব রেখেছেন বলেই খবর। অগস্টের ৩, ৭ তারিখে চিঠি দেওয়ার পর এখনও কোনও সদুত্তর না আসায় আজ ফের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন অ্যাসোসিয়েশন ফর হেলথ সার্ভিস ডক্টর-এর জেনারেল সেক্রেটারি প্রোফেসর মানস কুমার গুমটা।
এরই পাশাপাশি আজ স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে সংগঠনের। মুখ্যমন্ত্রীকে সাম্প্ৰতিক সময়ে যে সমস্ত ইস্যুতে চিঠি দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এরমধ্যে সংক্রমিত স্বাস্থ্যকর্মীদের চিকিৎসা অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব, পিজি হাসলাতালের ট্রমা সেন্টারকে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্যে ডেডিকেটেড কোভিড হাসলাতাল গড়ার প্রস্তাব এবং সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাভাবিক ভীতি কাটিয়ে পরিষেবার মান উন্নত করতে নিয়মিত অ্যান্টিবডি টেস্ট করা। আরও বিষদে আলোচনার জন্য স্বাস্থ্যসচিব আগামী সপ্তাহে সময় দেবেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সদস্যরা।
মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে যে বিষয়গুলি অ্যাসোসিয়েশন ফর হেলথ সার্ভিস ডক্টর-এর তরফ থেকে জানানো হয়েছে সেগুলি হল–
১. আইসিএমআর গাইডলাইন অনুযায়ী, সমস্ত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাইকর্মী, স্যানিটাইজেশনকর্মী, পুলিশকর্মী সমেত অন্যান্যদের স্বাভাবিক ভীতি কাটিয়ে আরও ভালো পরিষেবা পাওয়ার জন্য এবং সেরো সার্ভিলেন্সর প্রয়োজনে, নিয়মিত অ্যান্টিবডি টেস্ট চালু করতে হবে।
২. বারবার মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্বেও চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্যে ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতাল বাস্তবায়িত হয়নি। পিজি হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারকে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্যে ডেডিকেটেড হাসপাতালে উপযুক্ত পরিকাঠামো-সহ রূপান্তরের প্রস্তাব।
৩. প্রশাসন নিজেই জানিয়েছে দেরিতে হাসপাতালে পৌঁছনোর জন্যে ৭০ শতাংশ কোভিড রুগী মারা যাচ্ছে। সেফ হোম বা হোম আইসোলেশনে থাকা রুগীদের প্রশাসনের পক্ষে নজরদারির/চিকিৎসার অভাব কারণ হলেও, সময়মত অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়াই বড় কারণ। কোভিড মনিটরিং সেলের সক্রিয়তা নিয়ে বহু অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। অবিলম্বে ক্লাব এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে থাকা অ্যাম্বুলেন্স অধিগ্রহণ করে কোভিড অ্যাম্বুলেন্সের সমস্যা মেটাতে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে।
৪. কোভিস সঙ্কটে, মানবিক মুখের পরিবর্তে, সরকারি অ্যাডভাইসারিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, চূড়ান্ত স্বাস্থ্য ব্যবসা চলছে। স্যাটেলাইট সেন্টারগুলো ব্যবসার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। আমাদের দাবি প্রতিটি কর্পোরেট হাসপাতালের ন্যূনতম ২৫ শতাংশ শয্যা কোভিড চিকিৎসার জন্যে সংরক্ষিত করতে হবে। প্রয়োজনে অধিগ্রহণ করতে হবে। স্যাটেলাইট সেন্টারের খরচ সরকারকেই বহন করতে হবে। প্রাইভেট/কর্পোরেট হাসলাতালে চিকিৎসা ব্যয়ে স্বচ্ছতা আনতে শুধু অ্যাডভাইসারি নয়, প্রশাসনের কঠিনতম নজরদারি রাখতে হবে। দোষী প্রমাণিত হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সম্প্ৰতি গঠিত প্রোটোকল মনিটরিং টিমকে, কর্পোরেট হাসপাতালের কোভিড চিকিৎসা বিলের স্বচ্ছতায় নজরদারির দায়িত্ব নিতে হবে।
৫. সরকারি ওয়েবসাইটে কার্যকরী শয্যা এবং ফাঁকা থাকা শয্যার বিভ্রান্তি দূর করতে হবে। প্রস্তাবিত শয্যা নয়, চালু থাকা শয্যার হিসেব ওয়েবসাইটে দিতে হবে।
৬. কোভিড হাসপাতালে সমস্ত প্ৰয়োজনীয় এবং জীবনদায়ী ওষুধের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ করতে হবে।
৭. সাম্প্ৰতিক সময়ে এক বিপুলসংখ্যক চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড সংক্রমিত হচ্ছেন কিন্তু প্রশাসন কোনও তথ্য রাখছেন বলে মনে হয় না। চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের কোভিড সংক্রমিত হওয়ার তথ্য রাখা, ওয়েবসাইটে নিয়মিত প্রকাশ করা এবং চিকিৎসার পূর্ণ দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
৮. সরকার ঘোষিত চিকিৎসা অনুদান (১ লাখ চিকিৎসা ব্যয় / ১০ লাখ বিমা) দ্রুত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. নন-কোভিড হাসপাতালে, উপসর্গহীন রোগীদের থেকে, চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমিত হওয়া বন্ধ করতে, আমাদের দেওয়া প্রস্তাব সমূহ বাস্তবায়ন করতে হবে।
ছবি ঋণ : ইন্টারনেট
Comments are closed.