বর্ষীয়ান রাজনীতিক-আইনবিদ কাশীকান্ত মৈত্র প্রয়াত : একটি যুগের অবসান
সৌরভ সেন
বর্ষীয়ান বিশিষ্ট আইনজীবী তথা একসময়ের সুপরিচিত রাজনীতিবিদ কাশীকান্ত মৈত্র আজ বিকেলে কলকাতায় তাঁর সল্ট লেকের বাসভবনে প্রয়াত হয়েছেন। বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। সক্রিয় রাজনীতি বহুদিন ছাড়লেও সামাজিক হিতে তাঁর সক্রিয়তা ছিল আমৃত্যু। আইনবিদ হিসেবেও তিনি দুর্বলের সাহায্যে এগিয়ে আসতেন।
আইনজ্ঞ, রাজনীতিক, বাগ্মী তথা ভারতীয় গণপরিষদের সদস্য পণ্ডিত লক্ষীকান্ত মৈত্রের পুত্র কাশীকান্ত তরুণ বয়স থেকেই স্বাধীনতা-আন্দোলন ও সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। সুভাষচন্দ্র বসুর অনুরাগী ছিলেন তিনি। যৌবনে অগ্রণী কমিউনিস্ট ব্যক্তিত্ব সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক বক্তৃতায় তিনি গভীর ভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন, যদিও বামপন্থী রাজনীতিতে তিনি আসেননি।
১৯৬২ সাল থেকে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে পরপর ছ’ বার তিনি বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প, খাদ্য দফতরের মন্ত্রী ও পরে বিরোধী দলনেতা হয়েছিলেন। প্রজা সোশ্যালিস্ট পার্টি থেকে সংসদীয় রাজনীতির জীবন শুরু করে কংগ্রেস-রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পেয়ে পরবর্তী কালে জনতা পার্টিতে যুক্ত হন। কৃষ্ণনগরের জনহিতকর কাজে তিনি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত যুক্ত ছিলেন। উল্লেখ্য, তাঁদের বংশানুক্রমিক আদি নিবাস শান্তিপুরে।
২০১৬-য় তাঁর একমাত্র পুত্র প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. সুব্রত মৈত্রের অকালমৃত্যুর আঘাত সহ্য করেও আইনজগৎ ও সমাজজীবনে তাঁর সক্রিয়তা বজায় ছিল এবং সমাজভাবনায় তাঁর বক্তব্য ছিল সুস্পষ্ট।
তাঁর প্রয়াণে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গভীর শোক ব্যক্ত করেছেন। শোকবার্তায় মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘বর্ষীয়ান ব্যবহারজীবী ও অগ্রণী রাজনীতিবিদ স্বনামধন্য কাশীকান্ত মৈত্রের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। তিনি ছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক প্রয়াত ডাঃ সুব্রত মৈত্রের পিতা। কাশীকান্তবাবু দীর্ঘদিন কৃষ্ণনগর ও কৃষ্ণনগর পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৩ সালে তাঁকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান প্রদান করে। তাঁর মৃত্যুতে রাজনৈতিক জগতে শূন্যতার সৃষ্টি হল। আমি কাশীকান্ত মৈত্রের পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। তিনি ব্যক্তিগতভাবে আমাকে খুব ভালোবাসতেন, আজ একথা স্মরণ করি।’
Comments are closed.