গৃহবধূ রুম্পা নিয়োগীকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় ৩ জনের যাবজ্জীবন
রূপম চট্টোপাধ্যায়
গৃহবধূ রুম্পা নিয়োগীকে হত্যার অভিযোগে মঙ্গলবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল রুম্পার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির। এদিন হাওড়ার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা বিচারক সঞ্জীব দে বেলুড়ের বি কে পাল টেম্পল রোডের বাসিন্দা রুম্পার স্বামী রাজ নিয়োগী, শ্বশুর চঞ্চল ও শাশুড়ি মিঠুকে পণের দাবিতে অত্যাচার করে পুড়িয়ে মারার অভিযোগে এই সাজা দিয়েছেন।
রুম্পার মা বিষ্ণুপ্রিয়া দাস অভিযোগ করেছিলেন ২০১৩ সালের জুলাই মাসে রাজের সঙ্গে রুম্পার বিয়ে হয়। সেই সময় হবু বরের দাবিমতো ৩০ হাজার টাকা নগদ, গয়না, আসবাবপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু বিয়ের পর আরও পণের দাবিতে অত্যাচার চলতে থাকে মেয়ে রুম্পার ওপর। রুম্পার পরিবার খুবই গরিব এবং ওর মা লোকের বাড়ি পরিচারিকার কাজ করত। চেয়েচিন্তে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিল।
এরপর ২০১৪ সালের ৯ মে বিকেলে রুম্পার ভাই দিদির বাড়িতে যায়। তার সামনেই রুম্পাকে শাশুড়ি মিঠু নিয়োগী গালিগালাজ করতে থাকে। সেদিন রাতেই রাজদের এক প্রতিবেশী রুম্পার মার পাশের বাড়িতে ফোন করে জানায় রুম্পা আগুনে দগ্ধ হয়ে হাওড়া হাসপাতালে ভর্তি। রুম্পার মা ও ভাই হাওড়া হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারে রুম্পা ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। সেদিন রাতেই অবস্থার অবনতি হওয়ায় রুম্পাকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে রুম্পা জানিয়েছিল তাঁর গায়ে আগুন লাগিয়ে খাটের নীচে ঢুকিয়ে দিয়েছিল স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি তিনজন মিলে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে 498A, 304B ধারায় মামলা দায়ের হয়। ২০১৪ থেকেই আসামীরা বিচারাধীন বন্দি ছিল। এই মামলায় সরকার পক্ষে ছিলেন সিনিয়র এপিপি ব্রজেন শাসমল। এই নিয়ে তিনি প্রায় ১৩টি মামলায় অভিযুক্তদের সাজা দেওয়ার বিরল কৃতিত্ব অর্জন করলেন। এই আইনজীবীর দক্ষতায় আস্থা প্রকাশ করেছেন মৃতা রুম্পার পরিবার। রুম্পার এক আত্মীয় জানিয়েছেন, ‘দেশে এবং আমাদের রাজ্যে নারী নির্যাতন বেড়েই চলেছে। তবু আসামীরা শাস্তি পেলে সামাজিক বিচার না মিললেও আইনি বিচারের উপর মানুষের আস্থা বাড়বে।’
Comments are closed.