সুন্দর চুলের গোপন রহস্য
জ্যোৎস্না পাল, রূপবিশেষজ্ঞ, ফোন : +৯১ ৮২৯৬০ ৩৬৬১৫
সুন্দর চুলের আধিকারী হতে কে না চায়। রাস্তা ঘাটে কাজেকম্মে বেরতেই হবে আপনাকে। কিন্তু কীভাবে যত্ন করবেন চুলের? তেল, শ্যাম্পুর বাইরেও বেশ কিছু ছোটখাট ঘরোয়া উপায়েও চুলের যত্ন নেওয়া সম্ভব। এমনই কয়েকটি টিপস দেখে নিন…
১. প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই :
সবসময় চেষ্টা করা উচিত সূর্যের আলো, রোদ, বৃষ্টি এবং ধুলোবালি থেকে চুলকে সুরক্ষিত রাখা। সূর্যের কড়া রোদ, তাপ, ধুলোবালি ইত্যাদি চুলের দুর্দশা ডেকে আনে। ধীরে ধীরে জমাট বাঁধা শুরু করে চুলের গোড়াতে। চুল পড়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ এটিই।
২. ভেজা চুলের ট্রিট :
ভেজা অবস্থায় থাকাকালীন চুলের গোড়া থেকে চুল ভেঙে যাওয়া সবচেয়ে সহজ। তাই ভেজা চুলে চিরুনি ব্যবহার না করাই ভাল।
৩. শ্যাম্পু করার সঠিক উপায়
: চুল পরিষ্কারের জন্য চুলের ধরন বুঝে ভাল মানের শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। শ্যাম্পু করার সময় ভাল করে মাসাজ করবেন। তবে নখ দিয়ে নয়। নিয়মিত কন্ডিশনার বা তেল ব্যবহার করা ভাল। এর ফলে চুল মসৃণ থাকে।
৪. একই ধরনের হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন :
চুলের যত্ন নেওয়ার সময় একই কোম্পানির অনুরূপ উপাদানে তৈরি প্রোডাক্ট ব্যবহার করা উচিত। এতে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই আপনার চুলের যত্ন নিতে পারবেন। যে কোম্পানির প্রোডাক্ট আপনার জন্য ভাল, শুধু সেই কোম্পানির প্রোডাক্টই ব্যবহার করবেন।
৫. অতিরিক্ত হিট দেওয়া থেকে বিরত থাকুন :
অনেকেই অফিস যাওয়ার সময় তাড়াতাড়ি করে চুল শুকোতে ড্রায়ার ব্যবহার করেন। ওই তাপ চুলকে ভেঙে দেয়। তাই ব্লোয়ার, আয়রন অথবা চুল স্ট্রেটনার যদি ব্যবহার করতেই হয় তাহলে সাবধানতার সঙ্গে তা করা উচিত। কখনওই অতিরিক্ত তাপ রাখবেন না।
৬. তোয়ালে ব্যবহার করুন আলতো ভাবে :
অনেকেই চুলকে মোছার সময় খুব চাপ প্রয়োগ করে চুল মুছে থাকে। এতে বারবার ঘর্ষণের ফলে চুল তার সুস্থতা হারিয়ে ফেলে। গোড়া থেকে চুল ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই চুল মোছার সময় যতটা সম্ভব আলতো ভাবে তোয়ালে বা গামছা ব্যবহার করা উচিত।
৭. আঁটসাঁট বেণী নয় :
ঘুমোনোর আগে শক্ত করে বেণী না করাই ভাল। এতে চুল একসঙ্গে থাকবে, কিন্তু টানটানে থাকবে না।
ফলে চুল ভেঙে যাওয়ার সুযোগ কম।
৮. ভালো বালিশের কভার ব্যবহার করুন :
কটনের কাপড় রুক্ষ হয়। যা থেকে তৈরি বালিশের কভারে ঘুমালে চুল ভেঙে যাওয়া একটি দৈনন্দিন ঘটনা হয়ে যেতে পারে। তাই বালিশের জন্য বরাবর পাতলা কাপড়ের কভার ব্যবহার করা উচিত।
৯. ঠান্ডা জলের ব্যবহার :
গরম জলের ব্যবহার চুলের জন্য ক্ষতিকর। তাই চুল পরিষ্কারের জন্য সবসময় ঠান্ডা জল ব্যবহার করুন। শীতকালে অনেকে চুলে গরম জল ব্যবহার করে থাকে, এটি হেয়ার ড্যামেজের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।
১০. চুল নিয়মিত ব্রাশ করুন :
চুল নিয়মিত চিরুণি ব্যবহার করা প্রয়োজন। এতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বড় চুল হলে নিয়ম করে দিনে ২-৩ বার হেয়ার ব্রাশ বা চিরুণি ব্যবহার করা উপকারী, রাতে ঘুমানোর আগেও একবার চুল ব্রাশ করুন। সেই সঙ্গে জরুরি মোটা দাঁতের কাঠের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানো। তাতে জটমুক্ত হবে চুল, স্বাস্থ্যের আভায় ঝলমল করবে।
১১. চুলে হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন :
চুল ভাল রাখার জন্য ধরন বুঝে হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন। চুল শুষ্ক বা মিশ্র হলে ১০ থেকে ১৫ দিন পরপর, আর তৈলাক্ত হলে ১৫ দিন পরপর চুলে প্যাক লাগান। ঘরে তৈরি প্যাক চুলের সুরক্ষায় বেশি কার্যকরী।
দই-মধু, অ্যালোভেরা-মধু বা নারকেল তেল-ডিম আর লেবুর রসের মিশ্রণে তৈরি প্যাক চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে। এর মধ্যে কোনটি আপনার চুলের জন্য সেরা সেটা বুঝে নিতে হবে। যেটি ব্যবহারের পর চুল সবচেয়ে মসৃণ থাকবে, সেটির উপর আস্থা রাখুন।
১২. স্বাস্থ্যকর খাবার :
চুল ভাল রাখতে গেলে স্বাস্থ্যকর খাবারও প্রয়োজন। আপনার স্বাস্থ্য আপনার চুলে প্রতিফলিত হয়। আপনি স্বাস্থ্যকর থাকলে, ভাল থাকবে চুল। আর তাই আপনার চুলের বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন ও প্রোটিনযুক্ত খাবার নিয়মিত গ্রহণ করুন। প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে বেশিদিন। ডাল, ডিম, সোয়াবিন, মাছ ইত্যাদি খান নিয়ম করে। আয়রন একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ যৌগ, তার অভাবে গোড়া আলগা হয়ে চুল পড়া বাড়ে।
Comments are closed.