Bengal Fast
বিশ্ব মাঝে বাংলা খবর

২১-এ ‘শ্রীকৃষ্ণ’ পাবে কি রাজ্য বিজেপি

বীরেন ভট্টাচার্য

“যা নেই ভারতে, তা নেই ভারতে…”– কবির এই লেখা দিয়ে লেখাটা শুরু করলাম, ভারতে অর্থাৎ মহাভারতে। লেখাটা যখন ভারতীয় রাজনীতি নিয়ে তখন আমার মনে হয়, মহাভারত ছাড়া অন্য কোনও ভাল উপমা হতে পারে না। মহর্ষি ব্যাসদেবের লেখা এই মহান গ্রন্থ একাধারে ধর্ম, আবার কাব্য, রাজনীতি, কূটনীতি, শাসনব্যবস্থা সব দিক থেকেই উদাহরণ এবং বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে।

যাই হোক এবার বিষয়ে ঢুকে পড়ি, কারণ এখন ইন্টারনেট এবং দ্রুততার যুগে বড় লেখার থেকে ছোট লেখার নাকি কদর বেশি। ২০১৪ সালে ইউপিএ সরকারকে রাইসিনা পাহাড়ের বাংলো থেকে উৎখাত করে দিয়ে ক্ষমতায় আসেন নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি এবং বিজেপি। তারপর থেকে একের পর এক রাজ্যে ফোটে পদ্মফুল। সময় যতই এগিয়েছে, একের পর এক রাজ্যে পাপড়ি মেলেছে পদ্ম। অন্যান্য রাজ্যে ক্ষমতা দখলের পর, এবার তাদের লক্ষ্য বাংলা। কারণ তা নাহলে নাকি ষোলোকলা পূর্ণ হবে না।

২০১৪-র পর ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচন গিয়েছে ঠিকই, তবে সেখানে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি গেরুয়া বাহিনী। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে দারুণ ফল করার পর থেকেই বাংলা দখলের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়েছে অশোক রোড। শুনছি নাকি ক্ষমতায় আসবে, ‘সোনার ভারত’ গঠনের পর এবার নাকি ‘সোনার বাংলা’ গড়া হবে। বেশ ভালই, কোনও গণতান্ত্রিক দল কেন্দ্রে সরকার গঠন করার পর, তারা যে অঙ্গরাজ্যগুলিতেও দখল করতে চাইবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে মুশকিলটা হল, ক্ষমতায় অর্থাৎ কোমরের জোরে।

- Sponsored -

চায়ের দোকানে, বিভিন্ন আড্ডাখানায় রাতারাতি গজিয়ে ওঠা বিজেপি সমর্থক বলে পরিচিতদের দেখছি বাংলা দখলের ব্যাপারে তাঁরা খুবই আত্মবিশ্বাসী। আর সন্দেহটা এখানেই ভাই। এই প্রসঙ্গে একটা গল্প বলি, ভাল লাগবে। ভীম আর জরাসন্ধের যুদ্ধ, দুজনেই খুব বড় বীর। বীরত্বে, শ্রেষ্ঠত্বে কেউ কারও চেয়ে কম নয়। তবে যু্দ্ধের ফয়সালা হচ্ছে না। অর্থাৎ সমানে সমানে টক্কর চলছে। একে অপরের সব আক্রমণই চেনা। সেই জন্যই ঠিক হার-জিত ঠিক হচ্ছে না। তখন শ্রীকৃষ্ণ আড়াল থেকে অশ্বত্থ গাছের পাতা চিড়ে ভীমকে ইশারা করলেন। ভীম বুঝতে পেরে জরাসন্ধের পা ধরে চিড়ে দুদিকে ফেলে দেওয়াতে জরাসন্ধ বধ হল। অর্থাৎ কী, যুদ্ধের কৌশল, এখনও পর্যন্ত দুবার প্রবল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একজনন নেত্রীকে পরাস্ত করতে আজ পর্যন্ত বিজেপি কী কী আন্দোলন করেছে সেটা আমার মাননীয় বিজেপি নেতৃত্ব এবং সমর্থকদের কাছে প্রশ্ন রইল। শুধুমাত্র মমতা সরকার দুর্নীতি পরায়ণ, খারাপ, ইত্যাদি ছেঁদো কিছু অভিযোগ তোলা ছাড়া আর-কিছু বিজেপি করেছে বলে আমার মনে পড়ছে না।

জমি আন্দোলন মানে ওই ভূমিসংস্কার আরকি। আর সেটা করেই একসময়ে বামেরা ক্ষমতায় এসেছিল। আবার সেই জমি আন্দোলনের ধাক্কাতেই লালবাড়ি থেকে একবারে উৎখাত হয়ে গেল ৩৪ বছরের শাসকদল। নেপথ্যে সেই আন্দোলনের কৌশল। ভূমিসংস্কার করে বামেরা ক্ষমতায় এসেছিল ঠিকই তবে সিঙ্গুরে যে পদ্ধতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (তৎকালীন রেলমন্ত্রী) জমি আন্দোলন করেছিলেন সেই পথ বামেদের অচেনা ছিল। সেই জন্যই তৃণমূলের গলায় মালা পরিয়েছেন জয়লক্ষী। আমি তো এখনও পর্যন্ত বিজেপিকে পথ দেখানোর মতো কোনও ‘শ্রীকৃষ্ণ’ দেখতে পাইনি, তাহলে কে পথ দেখাবে তাদের! আমি কোনও নির্দিষ্ট পরিমাণ বলছি না, তবে এটুকু বলতে পারি, এইভাবে যদি ‘মোদি অ্যান্ড কোং’ চলতে থাকে, তাহলে বাংলায় গোটা কতক আসন ছাড়া তার থেকে বেশি কিছু পাওয়ার স্বপ্ন অধারই থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বাকিটা জনগণের হাতে।

বীরেন ভট্টাচার্য, রাজনৈতিক সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি, ফোন : +৯১ ৬২৯৬৬ ৩১৬৪৮ (মতামত ব্যক্তিগত)

Subscribe to our Whatsapp Group for daily news alerts.


You might also like

- sponsored -

Comments are closed.