করোনা ঠেকাতে নাইট কার্ফু, কড়া সিদ্ধান্তের ছাড়পত্র রাজ্যগুলিকে
বীরেন ভট্টাচার্য, নয়াদিল্লি
সংক্রমণের হার অনুযায়ী যে খারাপ রাজ্যের তালিকা কেন্দ্রীয় সরকার তৈরি করেছে, তারমধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্য। বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে করোনা সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর সংখ্যায় রাশ টানতে নতুন করে গাইডলাইন প্রকাশ করল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। কেন্দ্রের নয়া গাইডলাইন জারি করা হয়েছে, দেশে যেভাবে ধীরে ধীরে করোনার হার কমছে, সেই হার যাতে বজায় থাকে, তারজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য। ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হতে চলা নয়া গাইডলাইনে বলা হয়েছে, রাজ্যগুলি তাদের রাজ্যের সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার পর্যালোচনা করে স্থানীয়স্তরে কনটেনমেন্ট জোন, নাইট কার্ফু জারি করতে পারবে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চালু থাকবে নয়া গাইডলাইন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের গাইডলাইনে বলা হয়েছে, “নিজেদের রাজ্যে করোনা সংক্রমণের হার পর্যালোচনা করে স্থানীয়স্তরে বিধিনিষেধ, নাইট কার্ফুর মতো কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি”। যদিও কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও আলোচনা না করে, কনটেনমেন্ট জোনের বাইরে স্থানীয়স্তরে কোনও লকডাউন জারি করতে পারবে না। কেন্দ্রের তরফে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, “জারি করা কনটেনমেন্ট জোন এবং তার বিধিনিষেধগুলি যাতে কঠোরভাবে পালন করা হয়, তা নজরদারি করবে জেলা, পুলিশ ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ”। এছাড়াও করোনায় জারি করা স্বাস্থ্যবিধি এবং বিধিনিষেধ না মানলে, তারজন্য অতিরিক্ত জরিমানা করারও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে। বিভিন্ন ধরনের জমায়েতের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি। সাপ্তাহিক হাট বা নিত্যদিনের বাজারগুলিতে মাস্ক পরা এবং অন্যান্য শারিরীক দূরত্ববিধি বজায় রাখার মতো নিয়মগুলি সবাইকে মেনে চলতেই হবে বলে জানানো হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, কনটেনমেন্ট জোনগুলিতে শুধুমাত্র জরুরি কাজকর্ম করা যাবে, জরুরি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রি এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত কারণ ছাড়া কনটেনমেন্ট জোনের বাইরে বাইরে বেরোনো যাবে না। এই কাজে নজরদারির জন্য তৈরি করা টিম বাড়ি বাড়ি গিয়ে নজরদারি চালাবে। কেন্দ্রের তরফে নয়া নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, নির্ধারিত প্রটোকল বা নিয়ম মেনে পরীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে, পজিটিভ ধরা পড়়লে তাঁদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে হবে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত কনট্যাক্ট পার্সনদের ট্রেস করা সম্ভব এবং তাদের নিয়মমাফিক কোয়ারান্টিনের ব্যবস্থা করতে হবে, পজিটিভি ধরা পড়লে আইসোলেশন এবং তাঁদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে, করোনার বিধিনিষেধ এবং সচেতনতা সম্পর্কে প্রচার চালিয়ে যেতে হবে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, অফিসগুলিতে শারিরীকদূরত্ব বিধি মেনে চলতে হবে। যে শহরগুলিতে ১০ শতাংশের বেশি রয়েছে সংক্রমণের হার, সেখানে অফিসটাইম ভাগ করে করার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করতে পারে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি। তবে কনটেনমেন্ট জোনের বাইরে সমস্ত কাজই বজায় থাকবে বলে জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে। যদিও বেশ কিছু ক্ষেত্রে কয়েকটি বিধিনিষেধ করা হয়েছে। যেমন :
১. স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অনুমতি ছাড়া আন্তর্জাতিক উড়ান ব্যবহার করা যাবে না;
২. ৫০ শতাংশ দর্শকাসন নিয়ে চলবে সিনেমা হল, থিয়েটার;
৩. শুধুমাত্র ক্রীড়াবিদদের প্রশিক্ষণের জন্য চালু থাকবে সুইমিং পুল;
৪. প্রদর্শনী হল খোলা হবে শুধুমাত্র ব্যবসার কাজে;
৫. কোনও হলে সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, ধর্মীয় জমায়েতের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশের বেশি দর্শক রাখা যাবে না, খোলা জায়গায় হলে তা ২০০ জনের বেশি নয়।
তবে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বলা হয়েছে, পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে এই নিয়ম কঠোর বা শিথিল করতে পারে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি। পাশাপাশি কোনও ব্যক্তি, বা পণ্যের আন্তঃরাজ্য বা অন্তঃরাজ্য চলাচলে বাধা দেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
Comments are closed.