হাতরাসে সিবিআই, রাজধর্ম নাকি ড্যামেজ কন্ট্রোল?
বীরেন ভট্টাচার্য, নয়াদিল্লি
উত্তরপ্রদেশের হাতরাস দিনভর দেখল রাজনীতির পাশা খেলা। তবে ঘুঁটি ওলটালো সন্ধ্যায়। হাতরাসের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। হাতরাসকে বাজি রেখে দিনভর ঘুঁটি চালাতে থাকল রাজনৈতিক দলগুলি, তবে তার স্পটলাইট কেড়ে নিলেন কংগ্রেসের যুবরাজ রাহুল গান্ধি এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধি।
সপ্তাহের শেষ দিনটা শুরু হয়েছিল আগের দিন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলকে আটকানোর মধ্যে দিয়ে। এদিন স্থানীয় থানায় এফআইআর দায়ের করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিকরা। তার আগেই আকবর রোড ঘোষণা করে এদিন নির্যাতিতার বাড়ি যাবেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি এবং তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধি। তবে প্রবল সমালোচনা এবং চাপের মুখে এদিন প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, সংবাদমাধ্যমকে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হবে। প্রিয়াঙ্কা গান্ধি জানান, শনিবার না পারলে আবারও সেখানে যাবেন তিনি।
এদিকে কংগ্রেসের হাতরাস সফরের খবর পেতেই তোপ দাগেন বিজেপি নেত্রী তথ্য কেন্দ্রীয়মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। কংগ্রেসের সফরকে কটাক্ষ করে কেন্দ্রীয়মন্ত্রী বলেন, “মানুষ কংগ্রেসের কৌশল জানে। সেই জন্যই তাঁরা বিজেপিকে ২০১৯ নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় দিয়েছিলেন। মানুষ জানে, তাঁদের হাতরাস সফর নির্যাতিতার পরিবারকে বিচার পাইয়ে দিতে নয়, নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে।”
দিনভর ঘরে বাইরে প্রবল চাপে ছিল বিজেপি এবং উত্তরপ্রদেশের সরকার। এদিন দিল্লি থেকে দুপুর ২.৩০ নাগাদ হাতরাস রওনা দেন রাহুল গান্ধি এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধি। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন শশী থারুর-সহ দলের মোট ৩০ জন সংসদ। চমক ছিল সেই সফরেও, কারণ এদিন গাড়ি চালাচ্ছিলেন খোদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধি। দিল্লি- নয়ডা সীমানায় প্রায় ২০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কোনওভাবেই কংগ্রেস প্রতিনিধি দলকে সীমানা পার করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মতো দিল্লি-নয়ডা সীমানায় তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। সেখানে আটকে থাকাকালীন কংগ্রেস নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। এক কংগ্রেস কর্মীকে বাঁচাতে ছুটে গিয়ে ঢাল হয়ে দাঁড়ান প্রিয়াঙ্কা গান্ধি। এদিকে নয়ডায় যখন এই পরিস্থিতি, সেই সময় নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের দুই শীর্ষ আধিকারিক, অতিরিক্ত মুখ্য সচিব (স্বরাষ্ট্র) অবনীশ অবস্থি, এবং ডিজি এইচসি অবস্থি। নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে রিপোর্ট দেন তাঁরা।
সেখানে আটকে থাকার পর, পড়ন্ত বিকেলে তাঁদের হাতরাসে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। পরে এদিন সন্ধ্যায় নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন গান্ধি পরিবারের দুই সদস্য। অবশ্য পাঁচজন নেতাকে যেতে দেওয়া হয়। রাহুল গান্ধি বলেন, “কেউ আমাদের চুপ করতে পারবে না।” প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বলেন, “যখনই অন্যায় হবে, তখনই বিচারের জন্য ছুটে যাব, আমাদের কেউ থামাতে পারবে না।” এদিকে, এদিনই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন নির্যাতিতার পরিবারের লোকেরা। মৃতার ভাই বলেন, “আমরা জানতে চাই, সেদিন কার দেহ পোড়ানো হচ্ছিল। এবং যদি সেটা আমাদের বোনের দেহ হয় তাহলে জানতে চাই, এইভাবে কেন তাঁর দেহ জ্বালানো হল? আমরা সবাই পুলিশ এবং প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছি যাতে তাঁকে একবার শেষ দেখা দেখতে পারি।” তিনি জানান, “যখন আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট চাই, আমাদের বলা হয় ইংরেজি পড়তে না পারায় তোমরা তা বুঝতে পারবে না।” তাঁদের তরফে অভিযোগ জানানো হয়েছে, বাড়ির বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না তাঁদের। সবসময় বাড়ির চারপাশে পুলিশ রয়েছে।
এদিন সন্ধ্যায় হাতরাসের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তবে তাতেও উঠছে প্রশ্ন, কতটা নিরপেক্ষ তদন্ত করবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকা এই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা? চাপে পড়েই কি তবে সিবিআই? নাকি শেষ পর্যন্ত নিজের রাজ্য পুলিশের ওপর শেষমেষ আস্থা হারালেন মুখ্যমন্ত্রী!
Comments are closed.