অন্তর্বর্তীকালীন ত্রাতা সনিয়াই, ৬ মাসেই পূর্ণ সময়ের সভানেত্রী খুঁজবে কংগ্রেস

বীরেন ভট্টাচার্য, নয়াদিল্লি
বহু হাইভোল্টেজ ম্যাচই অনেক সময় অমীমাংসিত থাকতে দেখা গিয়েছে, এর নজির রয়েছে অনেক। সোমবার করোনা এবং আনলক প্রক্রিয়ার আবহে কংগ্রেসের ডাকা ভার্চুয়াল ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠককে খানিকটা সেই চোখেই দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। বৈঠক শুরুর আগের থেকেই নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল, এমনকী কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধি ইস্তফা দিচ্ছেন বলেও খবর রটে যায়। যদিও এদিনের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে তর্জন-গর্জনই সার, মূল সমস্যার সমাধান অধরাই রইল। খানিটকা আগেরবারের মতোই আবারও ৬ মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী রাখা হল সনিয়া গান্ধিকেই (Sonia Gandhi)।
শুরুটা একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে। কপিল সিবাল, গুলাম নবি আজাদের মতো বেশ কিছু কংগ্রেস নেতা ও ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের একটি চিঠি যায় হাইকম্যান্ডে। সেখানে নাকি দাবি করা হয়, দলে নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্ণ সময়ের সভাপতি নির্বাচন করা হোক। পাশাপাশি দলের খোলনলচে বদলে ফেলারও দাবি জানানো হয়। সেই চিঠি ঘিরেই এদিন সকাল থেকেই সরগরম ছিল কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক। বিগত কয়েক বছরে বোধহয় কংগ্রেসের শীর্ষস্তরের এমন হাইভোল্টেজ বৈঠক দেখা যায়নি।
তবে বৈঠকের শুরুতেই সেই সুর পাল্টে যায়। ম্যাডাম সনিয়া গান্ধির ভূয়সী প্রশংসা করে বসেন নেতারা। চিঠি প্রেরকরা বিজেপির সঙ্গে ষড়যন্ত্র করছেন বলেও দিনভর বিতর্ক দানা বাঁধে। চিঠির সময় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রাহুল গান্ধি। পরে ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য এবং দলের অন্যতম নেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, “রাহুল গান্ধি কখনই বলেননি যে, ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য বা তার বাইরে কেউ, সনিয়া গান্ধিকে চিঠি লিখেছেন বিজেপির সঙ্গে ষড়ষন্ত্র করে।”দলের এই গুঞ্জন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে গুলাম নবি আজাদ বলেন, বিজেপির সঙ্গে ষড়যন্ত্র প্রমাণিত হলে দল ছেড়ে দেবেন তিনি।
অন্যদিকে সনিয়া গান্ধির পদত্যাগের জল্পনায় বিচলিত হয়ে পড়েন অনেক নেতা। কর্নাটকের সিদ্ধারামাইয়া থেকে শুরু করে ঝাড়খণ্ডের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডঃ রামেশ্বর ওরাঁও সনিয়া গান্ধিকে ইস্তফা না দেওয়ার অনুরোধ করেন। সিদ্ধারামাইয়ার বার্তা, “যদি আপনি শারিরীকভাবে কাজ চালিয়ে যেতে না পারেন, তাহলে রাহুল গান্ধিকে রাজি করানো হোক।”
দিনভর জল্পনা, বিতর্ক, সওয়াল জবাবে ৭ ঘণ্টা পর শেষ হয় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক। তারপর কংগ্রেস নেতৃত্বের তরফে জানানো হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী থাকছেন সনিয়া গান্ধিই। দলের নেতা তথা কেএইচ মুনিয়াপ্পা বলেন, “ম্যাডামই কাজ চালিয়ে যাবেন এবং সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব স্থায়ী সভাপতি নির্বাচনে দলের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন হবে।”দলের নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করতে দ্রুত এআইসিসি অধিবেশন ডাকার প্রস্তাব দেন পি চিদাম্বরম। দলের নেতা পিএল পুনিয়া জানান “সনিয়া গান্ধিজি বলেছেন, সবাই একটি পরিবার এবং সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে দলকে মজবুত করে তুলতে হবে।”পাশাপাশি দলের তরফে তিনি বার্তা দেন, নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি জানানোর সবার অধিকার রয়েছে, তবে তা দলের মধ্যে করতে হবে, প্রকাশ্যে নয়, এই নিয়ে নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
Comments are closed.