Bengal Fast
বিশ্ব মাঝে বাংলা খবর

কৃষি বিলে ক্ষতির মুখেই পড়বেন কৃষকরা, মত জেএনইউ-এর অধ্যাপকের

বীরেন ভট্টাচার্য, নয়াদিল্লি

সদ্যসমাপ্ত বাদল অধিবেশন কৃষি সংক্রান্ত তিনটি বিল পাস করিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিলের বিরুদ্ধে সংসদের ভিতরে-বাইরে তুমুল বিক্ষোভ হয়েছে। সংসার চলাকালীন ওয়েলে নেমে যেমন বিক্ষোভ হয়েছে, তেমনি দুই শিবিরের বিরুদ্ধে সারা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে তুমুল বিক্ষোভ। কৃষি বিলকে ঐতিহাসিক বলে মন্তব্য করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন এই বিলের ফলে কৃষকরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন, তার নিরিখে বিলটি ঐতিহাসিক। যেভাবে করোনার সুযোগ নিয়ে ভোটাভুটি ছাড়াই বিলটি তড়িঘড়ি পাস করানো হয়েছে, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতির অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ বিকাশ রাওয়াল। তাঁর মতে, তিনটি বিলের মধ্যে প্রথম যে বিলটি রয়েছে কৃষি বিপণন বিল, সেক্ষেত্রে কৃষি বিপণনের বিষয়টি রাজ্যের এক্তিয়ার। তাঁর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যগুলিকে কৃষি বিপণন আইন সংস্কারের জন্য চাপ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার।

কৃষি বিপণন নিয়ে সাত দশক পর হঠাৎ করে কেন্দ্রীয় সরকারের বিল তৈরি করা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি। যদিও বিকাশ রাওয়ালের মতে এ বিষয়ে আইন তৈরি করতে পারে না কেন্দ্রীয় সরকার, যেহেতু এটি রাজ্যের বিষয়। তিনি জানান কৃষি বিপণনের জন্য রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন কৃষি মাণ্ডি থাকে, যেখানে কৃষিতে উৎপন্ন ফসল বিক্রি করেন কৃষকরা। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী কৃষি মাণ্ডির ৫ কিলোমিটার বা তার আশপাশে সমান্তরাল কোন মাণ্ডি বাজার তৈরি করা যায় না। সেই সবজি মাণ্ডিতে ফসলের দাম নির্ধারণ করে রাজ্যগুলি। পঞ্জাবে এই নিয়ম রয়েছে বলে জানান তিনি। বিকাশ রাওয়াল জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের আনা নতুন আইনে এই ধরনের কোনও নিয়ম নেই, সবজি মাণ্ডির ৫ কিলোমিটারের মধ্যে বা তার আশপাশে যে কেউ ফসল বিক্রি করতে পারবে।

- Sponsored -

নতুন আইনে ফসল বিক্রি করার ব্যাপারে কৃষকদের স্বাধীনতা থাকবে বলে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাদের মতে আগে তা ছিল না। সেই দাবিও নস্যাৎ করে দিয়েছেন বিকাশ রাওয়াল। সবসময়ই কৃষকদের ফসল বিক্রির স্বাধীনতা ছিল বলে জানান তিনি। তাঁর মতে অসম, উত্তরপ্রদেশ বা উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে একাধিক মাণ্ডি রয়েছে, কর্পোরেট সংস্থাগুলি সরকারি অর্থে তৈরি করা পরিকাঠামোযুক্ত জায়গায় বিনিয়োগ করতে চায় বলে মনে করেন তিনি। এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, এই আইনের ফলে কৃষকদের নয়, বড় কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে অনায্য ভাবে সরকারি পরিকাঠামো তৈরি করা জায়গাগুলিতে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। কারণ ওই কর্পোরেট সংস্থাগুলি সরকারি মাণ্ডিকে অলাভজনক করে তুলতে চায় যাতে সেই জায়গাটি তারা কিনে নিতে পারে এবং পরে সেটিকে ব্যবসায়ী কাজে লাগাতে পারে। সহায়ক মূল্য নিয়ে যে বিক্ষোভ তৈরি হয়েছে সে প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন তিনি।

অর্থনীতিবিদ বিকাশ রাওয়াল জানান, সহায়ক মূল্য ঘোষণা করলেই কৃষক তা পাবেন এমন কোনও গ্যারান্টি নেই। তাঁর মতে, সরকার মাত্র দুটি ফসল কেনে, বাকি ২১টি ফসল কেনে না। ফলে সহায়ক মূল্য ঘোষণা করে কৃষকদের খুব একটা লাভ হবে তা বলা যায় না। এর কোনও মূল্য নেই বলে মনে করেন তিনি। তাঁর যুক্তি, সহায়ক মূল্য দরে ফসল কিনতেই হবে এরকম কোনও বাধ্যবাধকতা বা আইন আনেনি সরকার। কারণ, যেহেতু সরকার কিনছে না, এবং সহায়ক মূল্য দরে না কিনলে, সেই ফসল সরকার কিনবে এরকম কোনও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি। তিনি মনে করেন, শুধুমাত্র সহায়ক মূল্য ঘোষণা করে কোনও লাভ হবে না, যদি না সেই দামে ফসল কেনার কেউ না থাকে।

কর্পোরেট সংস্থার হাতে জমির মালিকানা চলে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। পাশাপাশি তাঁর আশঙ্কা, ফসল উৎপন্ন করার পর তা পছন্দ না হলে কিনতে নাও পারে সংস্থাগুলি, ফলে সেক্ষেত্রে কৃষকদের কিছুই করার থাকবে না। যে বীজ কর্পোরেট সংস্থাগুলি দেবে সেই ফসল বাজারেও বিক্রি করা যায় না, ফলে সেখানেও কৃষকদের ব্যাপক মার খাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ বিকাশ রাওয়াল। পাশাপাশি তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “যদি কৃষক এবং কর্পোরেট সংস্থার মধ্যে কোনও বিষয়ে মতান্তর হয় তাহলে মীমাংসা কে করবে?” তাঁর মতে মীমাংসা করার মত যাবতীয় আইন সবই রয়েছে কর্পোরেট সংস্থার হাতে এবং সরকার রয়েছে তাদের পক্ষে। তাহলে কৃষকদের হয়ে সওয়াল করবে কে? তিনি মনে করেন “এখানে এমন দুইপক্ষ রয়েছে, যাদের মধ্যে কোনও মিল নেই, দুটি আলাদা মেরু।” ফলে তাদের মীমাংসা কীভাবে সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

বিকাশ রাওয়ালের আশঙ্কা, চুক্তি চাষের পর ফসলের বাজার দর যদি চুক্তির থেকে বেশি হয়, তাহলে কী হবে বা কম হলেই-বা যদি ওই সংস্থা ফসল বাতিল করে তাহলে কৃষক কোথায় ফসল বিক্রি করবে তার কোনও সদুত্তর এখনও নেই! একইসঙ্গে চুক্তি চাষ বা অন্যান্য বিষয়গুলিতে রাজ্য সরকারের হাতে কোনও আইন বা ক্ষমতা না থাকা নিয়েও আশঙ্কাপ্রকাশ করেছেন তিনি। কারণ সেক্ষেত্রে কৃষকদের যাওয়ার কোনও জায়গা থাকছে না। কৃষি বিল নিয়ে বিরোধীরা ভুল বোঝাচ্ছে বলে যে অভিযোগ তুলেছে সরকার, তার উত্তরে অর্থনীতিবিদ বিকাশ রাওয়াল বলেন, সরকারের উচিত ছিল কৃষকদের বোঝানো এবং তারপর বিলে হাত দেওয়া।

Subscribe to our Whatsapp Group for daily news alerts.


You might also like

- sponsored -

Comments are closed.