মেধাবী ছাত্রীকে সাহায্য প্রবাসী জৈব রসায়ন বিজ্ঞানীর
নিজস্ব সংবাদদাতা : মেধাবী ছাত্রীর পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এলেন মার্কিন প্রবাসী জৈব রসায়ন বিজ্ঞানী। নিজের মাধ্যমিক স্কুলের মেধাবী অথচ আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ছাত্রী লক্ষ্মী কামিল্যার পড়াশোনার ব্যাপারে সাহায্য্যর হাত বাড়িয়ে দিলেন আমেরিকার প্রবাসী জৈব রসায়ন বিজ্ঞানী তথা ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর ২ নং ব্লকের বেলিয়াবেড়া থানার মহাপাল শ্রী বিদ্যাপীঠের কৃতি প্রাক্তনী ড. রামকৃষ্ণ দে। মহাপাল শ্রী বিদ্যাপীঠের প্রাক্তন ছাত্রী লক্ষ্মী কামিল্যা বর্তমানে বেলিয়াবেড়া সরকারি কলেজের সোশিওলজি অনার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। এরই সঙ্গে লক্ষ্মী প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসতে চায় এবং প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় ৮টি বই কিনে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন রামকৃষ্ণবাবু।
ঘটনার যোগসূত্র খুঁজতে গেলে কয়েকবছর পিছিয়ে যেতে হয়। গোপীবল্লভপুর ২ নং ব্লকের জুনশোলা গ্রামে জন্মানো, রামকৃষ্ণ দে ১৯৯৪ সালে মহাপাল শ্রী বিদ্যপীঠ থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। বিভিন্ন চড়াই উতরাই পেরিয়ে, তিনি আজ মার্কিন মুলুকে কর্মরত স্বনামধন্য জৈব রসায়ন বিজ্ঞানী। গত ২০১৭ সালে তিনি নিজের কৈশোরের প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মহাপাল শ্রী বিদ্যাপীঠে এসেছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শ্রদ্ধা জানাতে এবং অনুজপ্রতিম ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে মত বিনিময় করতে। ক্লাসে গিয়ে আলাপচারিতায় তাঁর শিক্ষা জীবনের নানা কথা ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে তুলে ধরেন রামকৃষ্ণবাবু। বিদ্যালয়ের কৃতি প্রাক্তনীকে সামনে পেয়ে তাঁর উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় লক্ষ্মী কামিল্যা। ‘রামকৃষ্ণবাবু মহাপালের মতো গ্রামের স্কুলে পড়ে কীভাবে বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখলেন?’ রামকৃষ্ণবাবু তখন জানান, তিনি তাঁর বাবা শক্তি কুমার দে (বাঘুয়াসোল স্কুলে ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন)-র মতো শিক্ষক হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিজের কর্মপ্রচেষ্টা, গুরুজন ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আশীর্বাদ ও শুভাকাঙ্খীদের সঠিক পথ নির্দেশ তাঁকে এখানে পৌঁছাতে সাহায্য করছে।
এরই মাঝে রামকৃষ্ণবাবু জানতে পারেন মেধাবী ছাত্রী লক্ষ্মীর বাবা বেঁচে নেই। স্কুল মারফত জানতে পারেন মেধাবী ছাত্রী লক্ষ্মীকে কোনওভাবে সাহায্য করা যায়, তাহলে ভালো হয়। লক্ষ্মী ২০২০ সালের উচ্চ-মাধ্যমিকে নব্বই শতাংশের বেশি মার্কস পেয়ে মহাপাল শ্রী বিদ্যপীঠ থেকে পাস করে বেলিয়াবেড়া সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছে। সে পড়াশোনার সঙ্গে নানান প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিতে প্রয়োজন নানা ধরনের বই। লক্ষ্মীর এই প্রয়োজনের কথা বিভিন্ন যোগসূত্র মারফত রামকৃষ্ণবাবু জানতে পারেন। তিনি তাঁর সহপাঠী গৌতম পৈড়া ও আর এক পরিচিত শ্রী বিদ্যাপীঠের কর্মী পলাশ পাল মারফত মোট ৮টি বই সিলেকশন করে কিনে ফেলেন। সেই বইগুলো দিন কয়েক আগে গৌতম পৈড়া মারফত লক্ষ্মীর হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তাঁর দীর্ঘদিনের ইচ্ছা বাস্তবায়িত হওয়াতে রামকৃষ্ণদা যেমন খুশি, তেমনি আপ্লুত লক্ষ্মী। নিজেদের বিদ্যালয়ের প্রাক্তনীর এহেন উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছেন শিক্ষক সুদীপ কুমার খাঁড়া-সহ মহাপাল শ্রী বিদ্যাপীঠের অন্যান্য প্রাক্তনীরা, শিক্ষক-শিক্ষিকারা, ছাত্র-ছাত্রী ও বিদ্যালয়ের শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
Comments are closed.