নাট্যপ্রেমীদের বড়দিন, বড় উৎসবে সামিল ‘একটি প্রযোজনা’
সপ্তর্ষি মণ্ডল
বড়দিনের শীতল আবহে বাংলার নাট্যমোদী জনতার মননে উষ্ণতা প্রদান করতে ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর কলকাতার মুক্ত অঙ্গন রঙ্গালয়ে অনুষ্ঠিত হল ‘একটি প্রযোজনা উৎসব’।
২ দিনব্যাপী এই মিলন-উৎসবে সর্বাপেক্ষা লক্ষ্যণীয় বিষয় ছিল শহরের পাশাপাশি জেলার নানা প্রান্ত থেকে নাট্যমোদী দর্শকের সমাগম। সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি পালন করে, উপস্থিতির ঊর্ধ্বসীমার কড়াকড়ি থাকা সত্ত্বেও দর্শকদের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো, যা ২ বছর বয়সি এই তরুণ নাট্যদলের কর্মতৎপরতা ও জনপ্রিয়তার চাক্ষুষ দলিল দেয়। কোভিড-বন্দি শহরে বাংলা থিয়েটারকর্মীদের দক্ষতাকে নাট্যমোদীদের দরবারে তুলে ধরার এই উদ্যোগ এত সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়িত করতে পারার জন্য ‘একটি প্রযোজনা’র নাট্যযোদ্ধারা কুর্নিশের দাবি রাখে।
প্রথম বার অন্তরঙ্গ উৎসবের আয়োজনের পর এবার দ্বিতীয় বছরে এই তরুণ নাট্যদলটি আয়োজন করেছে মঞ্চ নাটকের উৎসব। ২ সন্ধ্যায় মোট ৬ টি নাটক অভিনীত হয়। রাজ্য আকাদেমির সদস্য সচিব হৈমন্তী চট্টোপাধ্যায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন উৎসবের। পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেতা ও নির্দেশকরা। অতিমারী আবহে দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকা জীবনে কোথাও মুক্তির স্বাদ দিয়েছে একটি প্রযোজনার এই আয়োজনে। মানুষ যখন ঘর থেকে বাহির হচ্ছে, তখন বড় দিনের উৎসবে পার্ক স্ট্রিট-ধর্মতলায় ভিড় করতে মন কেমন করে নাট্যপ্রেমীদের। সেই আক্ষেপ মিটিয়ে দিল ‘একটি প্রযোজনা’। বড় দিনের উৎসব মুখরতায় তারা উপস্থাপন করল নাট্য উৎসবের।
প্রথম সন্ধ্যায় ‘একটি প্রযোজনা’ শিশুশিল্পীদের নিবেদিত সুকুমার রায়ের ‘হিংসুটে’ দিয়ে নাট্যযাত্রার শুভ সূচনা করে আয়োজক দল। ভাস্কর পালের নির্দেশনায় কচিকাঁচাদের অভিনয় উপস্থিত দর্শকদের শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়। অতঃপর ‘খড়দহ থিয়েটার জোন’-এর নারীমুক্তির বার্তাবাহী ‘আমি তো সেই মেয়ে’ এবং ‘টালিগঞ্জ স্বপ্নমৈত্রী’ প্রযোজিত ‘ভাগ্য-বিচার’ মঞ্চস্থ হয়। সতীদাহ প্রথার প্রেক্ষাপটে প্রবীর গুহর নাটক ও তপন দাস নির্দেশিত ‘আমি তো সেই মেয়ে’ যেখানে বর্তমান যুগেও নারীজাতির মুক্তির লড়াইয়ের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরে। তেমনই মৈনাক সেনগুপ্তর লেখা ও ইন্দ্রনীল মুখার্জির নির্দেশিত ‘ভাগ্য-বিচার’ নাটকটি উপস্থিত দর্শকমননে নির্ভেজাল হাসির বীজ বুনে দিয়ে যায়।
উৎসবের দ্বিতীয় সন্ধ্যায়, ‘মাচার মানুষ’ প্রযোজিত ও সুচরিতা বড়ুয়া চট্টোপাধ্যায় রচিত ও নির্দেশিত নাটক ‘অ-সুখ’ এক অসহায় ভালোবাসার নাট্যদ্বন্দ্ব তুলে ধরে। তেমনই ওই সন্ধ্যার দ্বিতীয় নাটক ‘একটি প্রযোজনা’র ‘এক চিলতে রোদ্দুর’ মানসিক চিকিৎসার নামে ‘পাগলবাড়ি’তে নির্যাতিতদের বঞ্চনার গল্প তুলে ধরে। ভাস্কর পালের নাটকের মঞ্চে প্রয়োগ করেছেন নির্দেশক তপন দাস ও সহকারী নির্দেশক অভিষেক পাল। আনন্দমহল (সাউথ গড়িয়া) নিবেদিত অয়ন চট্টোপাধ্যায়ের নাটক ও সৌরভ মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশিত ‘মুক্তি’ রবীন্দ্রনাথের মুক্তচিন্তার জয়গান গায় এবং একই সঙ্গে এই নাট্য-যজ্ঞের শুভ পরিণতি সম্পন্ন করে।
Comments are closed.