করোনা আবহে ভারতীয় প্রাচীন প্রথাগুলিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন চিকিৎসকরা
রূপম চট্টোপাধ্যায়
উৎসবের মরসুমেও করোনার প্রকোপ অব্যাহত। দিল্লি-মুম্বই-কলকাতার মতো শহরে করোনার আতঙ্ক বেড়েই চলেছে। দেশজুড়ে ভাইফোঁটা বা ভাইদুজ পালিত হল এই অতিমারীকে সঙ্গে নিয়েই। তাই চিকিৎসকরা বলছেন বাইরে থেকে এলেই ভালো করে হাত-পা ধুতে হবে। হাত ও মুখ পরিষ্কার রেখেই অনেক ভাইরাসের সংক্রমণ রুখে দেওয়া সম্ভব। খাবার আগে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করা প্রয়োজন।চিকিৎসকরা বলছেন উৎসবের সময় সাবধানতা বাড়িয়ে পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। মাস্ক পরার সঙ্গে হাত-পা ধোয়ায় যত্নবান হতে হবে।
কলকাতা উডল্যান্ডস সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শান্তনু রায় এই প্রসঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, “বাইরে থেকে বাড়িতে ঢোকার আগে ভালো করে হাত-পা ধোয়া ও খাবার আগে ভালো করে হাত-মুখ ধোয়া একটি প্রাচীন ভারতীয় রীতি। পৃথিবীর অনেক দেশেই এই নিয়ম মানা হয় না। ফলে ওই সব দেশে জীবাণুঘটিত রোগের প্রকোপ বেশি। সেই জন্যই এই বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে রাষ্ট্র সংঘ ২০০৮ সাল থেকে প্রতি বছর ১৫ অক্টোবর দিনটিকে ‘গ্লোবাল হ্যান্ড ওয়াশিং ডে’ হিসেবে পালন করে আসছে।”
এই বিষয়ে ডা. শান্তনু রায় আরও জানিয়েছেন, “বর্তমান করোনার অতিমারীতে হাত-পা ধোয়ার গুরুত্ব অপরিসীম।” তাঁর মতে ছোট থেকেই বাচ্চাদের দাঁত মাজা, হাত-মুখ ধোওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ছোট-বড় সকলকেই প্রতিবার খাবার আগে ও টয়লেট ব্যবহারের পর ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
তিনি জানিয়েছেন, “৫ বছরের কম বয়সি বাচ্চারা সহজেই ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়। শুধুমাত্র হাত-পা-মুখ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখেই অনেকাংশে এই রোগ দুটিকে এড়ান সম্ভব।” ডা. রায় আরও জানিয়েছেন, “সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে শুধুমাত্র ভালভাবে হাত-পা ধুলেই প্রায় ৩৫ লক্ষ শিশুর মৃত্যু আটকানো যায়। তাই বর্তমান করোনা কালে হাত-পা ধোয়ার গুরুত্ব একটি অন্য মাত্রা পেয়েছে বলেই চিকিৎসকরা মনে করছেন।”
ভিয়েনা জেনারেল হাসপাতালে হাঙ্গেরিয়ান চিকিৎসক ইগনাজ সেমেনওয়াইজকে হ্যান্ড হাইজিনের জনক বলা হয়। অষ্টদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ডাক্তারি ছাত্ররা শব ব্যবচ্ছেদের পরেই প্রসব করাত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মায়েরা প্রসবের পর জ্বরে আক্রান্ত হত। অনেকে মারাও যেতেন। ডা. ইগনাজ বিষয়টি লক্ষ্য করেন। এরপর তাঁর হাসপাতালে ১৮৪৬ সালে প্রসব করানোর আগে সাবান দিয়ে হাত ধোওয়া আবশ্যিক করা হয়। ফলে আশ্চর্যজনক ভাবে প্রসূতি মৃত্যুর হার কমে যায়। রাষ্ট্র সংঘ তাই শিশু ও ছাত্রছাত্রীদের হাত ধোওয়ার সুঅভ্যাস গড়ে তোলার উপর প্রথম থেকেই জোর দিয়ে আসছে।
পূর্বতন মানব সম্পদ বিকাশ মন্ত্রকের অধীন কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষিকা শুক্লা চট্টোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, স্কুলস্তরে ছোট পড়ুয়াদের খাবার আগে হাত ধোওয়া ও অযথা নাকে-মুখে হাত না দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ভীষণ জরুরি। এই বিষয়ে এখন চিকিৎসকরা অভিভাবকদের সচেতন করছেন। শিক্ষকদেরও এই বিষয়টি নজরে রাখতে হবে। তাঁর বক্তব্য, করমর্দনের বদলে হাত জোড় করে নমস্কার ও হাত-পা ধোওয়ার মতো ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন রীতি অনেক বিজ্ঞানসম্মত। করোনা আবহে এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। এই মতের পক্ষে এখন দৃঢ় অবস্থান নিচ্ছেন চিকিৎসকরাও।
Comments are closed.