সমকাজে সমবেতনের দাবি : হাইকোর্টে এসএসকে ও এমএসকে শিক্ষকরা

রূপম চট্টোপাধ্যায়
আবেদন-নিবেদন কাজ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত রাজ্যের মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের সম্প্রসারক ও শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের সহায়িকা তথা শিক্ষকরা সমকাজে সমবেতনের দাবি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হল। ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট স্টেট অফ পাঞ্জাব বনাম জগজিৎ সিং মামলায় কর্মচারীদের একই ধরনের কাজে একই রকমের বেতন প্রাপ্য বলে সুপারিশ করেছিল। সেই রায়ের সূত্রেই, দেশে সমকাজে সমবেতনের বিষয়টি আইনত মান্যতা পায়। কিন্তু তারপরও দেশজুড়ে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থায় সমকাজে সমবেতনের বিষয়টি উপেক্ষিতই থেকে গেছে। শুধু বেসরকারি উদ্যোগেই নয়, খোদ বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্ৰীয় সরকারি সংস্থাতেও সমকাজে সমবেতনের বিষয়টি তেমন কোনও গুরুত্ব পায়নি। বহু ক্ষেত্রেই একই কাজ করে কর্মচারীরা অন্যদের তুলনায় কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
পশ্চিমবঙ্গের বুনিয়াদি শিক্ষায় শিশুশিক্ষা কেন্দ্র ও মাধ্যামিক শিক্ষাকেন্দ্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। বর্তমানে রাজ্যে এসএসকে এবং এমএসকের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় দশ লাখ। শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন প্রায় ৫০ হাজার। বর্তমানে এই শিক্ষাকেন্দ্রগুলি পঞ্চায়েত দফতরের অধীনে। তবে এই শিক্ষাকেন্দ্রগুলিকে স্কুল শিক্ষা দফতরের অধীনে নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। বাম আমলেও এমন একটি পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তৎকালীন স্কুল শিক্ষামন্ত্রী কান্তি বিশ্বাস। কিন্তু সেই সময়কার পঞ্চায়েত মন্ত্রী আনিসুর রহমানের তীব্র আপত্তিতে এই দফতর বদল সম্ভব হয়নি।
বর্তমান সরকারের পঞ্চায়েত দফতরের এক পদস্থ আমলা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছাতেই ২০১৯-এর এপ্রিল থেকে এসএসকে এবং এমএসকে শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। সরকারি একটি সূত্রে বলা হয়েছে এই শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির দাবিকে আর্থিক কারণে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই এটি স্কুল শিক্ষা দফতরের অধীনে নিয়ে আসা নিয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি করছে। যদিও মামলাকারী দুই শিক্ষক গৌতম দাস এবং গায়েত্রী পাণ্ডে বলেছেন, প্রাইমারি এবং উচ্চ প্রাইমারি স্তরের ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর কাজ করেও তারা অর্ধেকেরও কম মাইনেতে কাজ করে যাচ্ছেন যা শুধু আর্থিক কষ্টের নয়, অসম্মানেরও বিষয়। তাই সরকারের অনড় মনোভাবের জন্যই তারা সমকাজে সমবেতনের দাবি নিয়ে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হয়েছেন। এই মামলার মুখ্য আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। সহযোগী হিসেবে থাকছেন আইনজীবী বিক্রম ব্যানার্জি ও সুদীপ্ত দাশগুপ্ত।
Comments are closed.