আগামী বছরের শুরুতে নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে আক্রান্তের সংখ্যা, আশার বাণী শোনাল সরকারি প্যানেল
বীরেন ভট্টাচার্য, নয়াদিল্লি
অবশেষে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের হার নিয়ে কিছুটা আশার কথা শোনাল কেন্দ্রীয় সরকারি প্যানেল। ২০২১ সালের শুরুর দিক থেকে এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করবে বলে আশা প্রকাশ করছেন প্যানেলের সদস্যরা। তাঁরা মনে করছেন, সামনের বছরের প্রথম দিক থেকে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।
করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ রুখতে জারি করা লকডাউনে নাভিশ্বাস উঠেছে সমাজের বিভিন্ন স্তরের। ফলে ধাপে ধাপে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করার পথে এগিয়ে চলেছে দেশ ও সরকার। ইতিমধ্যেই আনলক ৫.০ চালু করা হয়েছে। কোনও জেলা, বা স্থানীয়স্তরে খুব গুরুতর কিছু না হলে কোনও লকডাউন জারি করা যাবে না বলে জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। এই পরিস্থিতিতেও দৈনিক সংক্রমণের হার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকার পর্যন্ত চাপে রয়েছে। রবিবার কেন্দ্রীয় সরকারের ১০ সদস্যের প্যানেল জানাল ২০২১-এর ফেব্রুয়ারি থেকে নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করবে এই মারণ ভাইরাস। আইআইটি হায়দরাবাদের অধ্যাপক এম বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে তৈরি করা ১০ সদস্যের কমিটি, লকডাউন জারি করার সময়, পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরা, বিভিন্নভাবে লকডাউনের সময় বদল করার মতো বিষয়গুলি নিয়ে গাণিতিক পদ্ধতিতে গবেষণা করেছে। পাশাপাশি মাস্ক পরা বা বিভিন্ন রকমের নিয়ম মেনে না চলার ফলাফল সম্পর্কেও গবেষণা করেছে ওই কমিটি। বিস্তারিত গবেষণার পর রিপোর্টে তারা উল্লেখ করেছে, যদি ঠিকঠাক নিয়মকানুন মেনে চলা হয়, তাহলে ২০২১-এর ফেব্রুয়ারি নাগাদ করোনা আক্রান্তের সংখ্যা খুব সামান্যই থাকবে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ওই সময়ে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছাতে পারে ১০.৫ মিলিয়ন। বর্তমানে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫ লক্ষ।
কমিটির প্রধান এম বিদ্যাসাগর বলেন, “যদি আমরা সবাই সমস্ত নিয়মকানুন মেনে চলি, তাহলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে খুব সংখ্যক আক্রান্ত হবে এবং করোনা নিয়ন্ত্রণে আসবে। যদিও আমরা জানি না, আবহাওয়ার ওপরে এই ভাইরাস কতটা নির্ভরশীল, এবং ভবিষ্যতে আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে কী হতে পারে। তবে এখন আমাদের সমস্ত নিয়ম কানুন মেনেই চলতে হবে। নাহলে প্রচণ্ড হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে। যদি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে খুব খারাপ কোনও পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তাহলে রাজ্য বা জেলাস্তরে কোনও লকডাউন জারি করার দরকার নেই।” ওই প্যানেল আরও জানিয়েছে, উৎসবের মরশুমে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে, তবে তা রোখা সম্ভব যদি সমস্তরকম নিয়মকানুন মেনে চলা হয়। প্যানেলের প্রধান জানান, “সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে, এই সময় প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। যদিও এই সময় আমরা চিকিৎসা বা অন্যান্য ক্ষেত্রে করোনা মোকাবিলায় অনেকটা এগিয়ে ছিলাম। লকডাউন না করা হলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হতে পারত, যা ২৬ লক্ষ পেরিয়ে যেত।”
করোনা এবং লকডাউনের সময়ে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের মাধ্যমে প্রচুর সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিককে ঘরে ফেরানো হয়েছে। সেই সমস্ত খতিয়ে দেখে কমিটি জানিয়েছে, মোট আক্রান্তের নিরিখে পরিযায়ী শ্রমিকদের থেকে সংক্রমণের হার খুবই সামান্য। প্যানেলের তরফে আরও জানানো হয়েছে, মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলা বা লকডাউন জারি করার ফলে অন্যান্য দেশের তুলনায় ভাল জায়গায় রয়েছে ভারত। কেন্দ্রীয় সরকারের প্যানেল সাফ জানিয়েছে, সুরক্ষাবিধি যথাযথ পালন না করে চললে, আবারও ব্যাপক হারে সংক্রমণ বাড়ে পারে। অতএব উৎসবের মরশুমে ভিড় এড়িয়ে, সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে ও স্বাস্থ্যবিধি পালন করেই উদযাপনের পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্যানেল।
Comments are closed.