রহস্যজনক খুনের পর মুন্সিপাড়ার সম্পত্তির ‘দখল’ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন!
রূপম চট্টোপাধ্যায়
জনাইয়ের সুনীল ব্যানার্জি নিজের বাড়িতেই রহস্যজনকভাবে খুন হয়েছিলেন ২০০৯ সালের ২৯ এপ্রিল। খুনিরা গ্রেফতার না হলেও পুলিশের সন্দেহ, বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিকানার জন্যই খুন হতে হয়েছিল সুনীলবাবুকে। তিনি অবিবাহিত ছিলেন, এবং তাঁর কোনও ঘোষিত উত্তরাধিকারী ছিল না। সুনীলবাবুর সম্পত্তি ছড়িয়েছিল জনাই, ডানকুনি, উত্তরপাড়া-সহ নানা জায়গায়।
উত্তরপাড়ার ৭ নং ডা. অমৃতলাল মুন্সি লেনে সুনীলবাবুর একটি বাড়ি ছিল। ১৯৯৫ সাল থেকে সেই বাড়ির একটি ঘরে “মুন্সীপাড়া অধিবাসীবৃন্দ” নামে একটি সামাজিক সংগঠন তাদের কাজ শুরু করে। সেই কাজে সন্তুষ্ট হয়ে সুনীলবাবু ১৯৯৯ সালে উত্তরপাড়া থানায় বসে ওই ঘর ব্যবহারের জন্য মুন্সিপাড়ার অধিবাসীদের লিখিত অনুমতি দেন। তারপর থেকে সংগঠনটি ওই ঘর থেকেই তাদের কাজকর্ম পরিচালনা করে আসছিল।
গত লকডাউনের সময় এরা লাগাতার পাঁচ মাস ধরে উত্তরপাড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের দুঃস্থ-অসহায় মানুষদের দু’বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এমনকী করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহায়তাও করেছে। মুন্সিপাড়া অধিবাসীদের এই কাজে এলাকার সাধারণ মানুষ ভীষণ ভাবে সাহায্যও করেছিল।
এদিকে সুনীলবাবু খুন হয়ে যাওয়ার প্রায় এগারো বছর পর হঠাৎই তাঁর পিসতুতো ভাই পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি শ্রীরামপুর কোর্টে একটি মামলা করে। সেই মামলার সূত্রে দুই বাদী-বিবাদী মুন্সিপাড়ার ওই বাড়িটির ৭০ ও ৩০ শতাংশের মালিকানার আদেশ পায় নিম্ন আদালতে। আদেশের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী রাংতা মুন্সি তরফে এই “ভুঁইফোড়” মালিকানাকে চ্যালেঞ্জ করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেই অধিবাসীবৃন্দের ওই ঘরটির ৭০ শতাংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। সংস্থার সামাজিক কর্মসূচি ব্যাহত হওয়ায় ভীষণ ক্ষুব্ধ স্থানীয় মানুষরা।
শুধু তাই নয়, দূর সম্পর্কের ভাই পরিচয় দিয়ে যে বাড়িটি দখল করতে চাইছে সে ও তার জামাইয়ের বিরুদ্ধে অশালীন আচরণের অভিযোগও তুলেছেন এলাকার মহিলারা। এছাড়া অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকটি ভুঁইফোড় সোশ্যাল মিডিয়া প্রোমোটারদের তরফে দুই মহিলাকে সামনে রেখে মিথ্যা ‘নাটক’ প্রচার করছে। ইতিমধ্যেই ওই আদেশের বিরুদ্ধে উত্তরপাড়ার বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী রাংতা মুন্সি শ্রীরামপুর আদালতে মামলা করেছেন। সুনীলবাবুর বাড়িটি দখল করতে চাইছে যে ব্যক্তি তার জামাই অভিষেক চক্রবর্তী, মেয়ে ঐন্দ্রিলা চক্রবর্তী ও প্রোমোটাররা সম্মিলিতভাবে ওই ক্লাবের সদস্যদের ও সংশ্লিষ্ট মহিলা আইনজীবীকে হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
Comments are closed.