একটি বাস্তব সমস্যার উপস্থাপনা– ‘জোনাকি’

সপ্তর্ষি মণ্ডল
হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব। হারাচ্ছে স্কুলের ভারী ব্যাগে। প্রতিদিন প্রাতঃরাশে একঝাঁক শিশু তাদের চেয়ে বড় ব্যাগ কাঁধে নিয়ে যাচ্ছে স্কুলে। কখনও আবার কড়া নিয়মের গান, আঁকা, নাচ ও সাঁতারের গতিতে হাফিয়ে উঠছে শিশুমন। তাকে হতেই হবে সব ক্ষেত্রে সেরা। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য মা-বাবাও সুনিপুণ স্বকীয়তার অন্তরালে লুকিয়ে থাকা অসীম সম্ভাবনার অফুরন্ত উৎসগুলিকে ‘খুন’ করছে। কিন্তু তার মন চাই অন্য কিছু।
মনের কথা কেউ জানতেও চায় না, জানে জোনাকি। মা-বাবার ইচ্ছাপূরণ করতেই তার দিন গুজরান। ফুরসত নেই স্বপ্ন দেখার। কিন্তু জোনাকিরা তো মিটিমিটি জ্বলতে চায়, বাস্তবে ও কল্পলোকে। গল্পের মেঘে ভাসতে চায় মেঘবালিকা সেজে। কিন্তু মা-বাবার বকুনি। তাদের অপূর্ণ ইচ্ছাপূরণ করা জোনাকিদের প্রথম কাজ।
উচ্চবিত্ত পরিবারের এক কন্যার জীবনে কল্পনা থাকতে পারে না। শুধুই প্রথম হওয়ার লড়াই। ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরজবরদস্তি করে তাকে স্কুলের জন্য তৈরি করা হয়। কী অসম্ভব নির্মমতা বোধ আমাদের আচ্ছন্ন করে রেখেছে কোন উচ্চাশায় কে জানে। এভাবে চাপ নিতে না পেরে জোনাকির মতো কৃতিকা’রা হারিয়ে যাচ্ছে চিরতরে। অবসাদ, একাকীত্ব গ্রাস করছে শিশুমন।
‘শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার’, ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’– এগুলো এখন শুধুই মুখের বুলি। এক্ষেত্রে জোনাকির এক ঠাকুরদা উত্তরণের পথ দেখিয়েছেন। চঞ্চুদীপের কল্পলোকে সে প্রজাপতি, ফুল, পাখিকে পেয়েছিল বন্ধুরূপে। কিন্তু কৃতিকা সেই পথ খুঁজে পায়নি। শুধুই প্রথম না হওয়াটা জীবনের শেষ নয়, সেটা বুঝে ওঠার আগেই আত্মহত্যা। এক্ষেত্রে জোনাকির পরিণতি অতটা নির্মম হয়নি, কারণ তার মা-বাবা নিজেদের ভুল বুঝেছিল। আগামীতে সমাজের একটি কৃতিকা বা জোনাকি যাতে আমাদের মধ্য থেকে হারিয়ে না যায়, সেই প্রচেষ্টার প্রয়াস– জোনাকি। ‘একটি প্রযোজনা’ নাট্যগোষ্ঠীর সমাজমনস্কতার এই রুচিবোধকে কুর্ণিশ করতেই হয়।
জোনাকি, ‘একটি প্রযোজনা’ (বসিরহাট), নির্দেশনা : ভাস্কর পাল, যোগাযোগ : +৯১ ৮৭৭৭৬ ৩৬১৯৬
Comments are closed.