লিক হয়েছে, ভরসা ‘সাইকেল কাকা’
শুভাশিস মণ্ডল
রাজ্যের গর্বের তথ্য প্রযুক্তি তালুক ‘সেক্টর ফাইভ’। ঝা-চকচকে রাস্তাঘাট, বহুতল বাড়ি দেশের অন্য অনেক প্রি-প্ল্যানড সিটিকে টেক্কা দেবে। প্রতিদিন এখানে কর্মসূত্রে প্রায় হাজার-হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করেন। কর্মস্থানে মূলত বাসে করে আসলেও অনেকেই আসেন নিজস্ব চারচাকা গাড়ি বা মোটর সাইকেলে। লকডাউনের পরে তা তো বেড়ে গেছে বহু গুন। প্ল্যানড সিটি হলেও তথ্য প্রযুক্তির এই পীঠস্থানে আমজনতার জন্য আছে চায়ের দোকান থেকে খাবারের হরেকরকম দোকান। কিন্তু সব কিছু থাকার মাঝেই নেই অনেক কিছুই। নেই গাড়ির চাকা পাঞ্চার হয়ে গেলে সারাইয়ের দোকান। দু-একটি হয়তো খুঁজলে পাওয়া যাবে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় সেটা বেশ কম। এমনই আবহে সেক্টর ফাইভে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সুখদেব বর। পোশাকী নাম ‘সাইকেল কাকা’। মহিষবাথানের এই মলিনবসন পরিহিতই তথ্য প্রযুক্তি তালুকের বাবুদের বিপদের বন্ধু।
হ্যাঁ, সেক্টর ফাইভ থেকে নিউটাউন এলাকায় আপনার চারচাকা বা দু’চাকা যদি লিক হয়ে যায় তবে চিন্তা করবেন না। হাঁক দিন সাইকেল কাকাকে। যেখানে যে অবস্থায় আছেন চলে আসবেন তিনি। দড়ি দিয়ে বাঁধা ভাঙাচোরা সাইকেলে পাম্পার ও যন্ত্রপাতি নিয়ে আপনার সামনে হাজির হবেন জামার বোতাম খোলা রোগাসোগা চেহারার সুখদেব থুড়ি সাইকেল কাকা।
প্রথম দর্শনেই হয়তো আপনার কপাল কুঁচকে যেতে পারে এই ‘বিশ্বকর্মা’কে দেখে। গাড়ির চাকা সারিয়ে হাওয়া দেবে সাইকেলের পাম্পারে! সাংসারিক নানান কথাবার্তার সঙ্গে সেক্টর ফাইভে কোথায় কী হয়েছে অকপটে বলতে বলতে আপনার গাড়ি রেডি করে দেবেন। দক্ষিণা চারচাকা বা দু’চাকা সবার জন্যই একই– একশো টাকা। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে একটু বেশিই রেট সাইকেল কাকার। কিন্ত লিক হওয়া গাড়ি ঠেলে ঠেলে নিয়ে যেতে গিয়ে কী বিপাকেই না পড়তে হয় তা তো আমরা জানিই। লিক হয়েছে, খবরটা খালি পৌঁছে দিতে হবে বিপদের বন্ধু এই দোহারা চেহারার মানুষটিকে। গত আমফানে তাঁর এক চিলতে দোকানঘরটি কার্যত ভেঙে গেলেও পরিষেবায় খামতি নেই। রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরেই চলছে তাঁর কর্মকাণ্ড।
এই মজার মানুষটির পরিষেবা মিলবে প্রতিদিন সন্ধে ৬ পর্যন্ত। যেখানে সেক্টর ফাইভে চাকা লিক হলে গাড়ি সারানোর মিস্ত্রি পাওয়াই ভার, সেখানে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত সাইকেল কাকার এই পরিষেবাই আশীর্বাদ।
Comments are closed.