প্রয়াত দৈনিক সংবাদপত্র ‘ছাপাখবর’-এর সম্পাদক বাচস্পতি দাস, শোকের ছায়া
সুদীপ কুমার খাঁড়া
প্রয়াত হলেন মেদিনীপুর শহর থেকে প্রকাশিত অখণ্ড মেদিনীপুর জেলার একসময়ের অন্যতম দৈনিক সংবাদপত্র ‘ছাপাখবর‘-এর সম্পাদক বাচস্পতি দাস বা বাচ্চুদা। ৬৩ বছরের বাচস্পতিবাবু ২০১৪ সাল থেকে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন। বিগত কয়েক মাস ধরে নিয়মিত ভাবে তাঁর ডায়ালিসিস চলছিল মেদিনীপুর শহরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে। শুক্রবার ডায়ালিসিস চলাকালীন নার্সিংহোমেই রাত ৮ টা ৫০ মিনিট নাগাদ তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। জরুরি ভিত্তিতে তাঁকে আইসিইউ–তে নিয়ে গেলেও শেষরক্ষা হয়নি। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই মেদিনীপুরের সাংবাদিকমহলে ও বাচস্পতিবাবুর পরিচিতমহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকেই নার্সিংহোমে ছুটে যান। রাতেই শহরের পদ্মাবতী শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। বাচস্পতিবাবু রেখে গেলেন হীরা দাস, দুই পুত্র অভিজিৎ দাস ও শুভজিৎ দাস এবং পুত্রবধূ সায়ন্তী দাসকে।
সদাহাস্য, মিতভাষী বাচস্পতিবাবু বন্ধু ও সাংবাদিক মহলে ‘বাচ্চুদা‘ নামে সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন। ‘ছাপাখবর’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক বাচ্চুদার হাত ধরেই রাজ্যের বহু সাংবাদিকের পথচলা। শিক্ষানবীশ সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন অনেকেই এই ছাপাখবর পত্রিকায়।
বাচস্পতিবাবু ১৯৫৭ সালে মেদিনীপুর শহরের মানিকপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শ্যামাপদ দাস মিষ্টি দোকানের কর্মচারী ছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা বাচস্পতি অল্প বয়স থেকেই বিভিন্ন পত্র–পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। বছর চারেক আগে শাঁকোটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তিনি শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসর নেন। একসময় যুক্ত ছিলেন মেদিনীপুরের অন্যতম দৈনিক ‘বিপ্লবী সব্যসাচী’ পত্রিকার সাথেও। ১৯৯৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে নিজ–উদ্যোগে মেদিনীপুর শহরের মানিকপুর থেকেই দৈনিক ‘ছাপাখবর‘ পত্রিকার প্রকাশ শুরু করেন। প্রথম দিকে বাণেশ্বর প্রিন্টার্স থেকে ছাপাখবর পত্রিকা ছাপা হত। মেদিনীপুরে দুটি বহুল প্রচারিত স্থানীয় পত্রিকা থাকা সত্ত্বেও ‘ছাপাখবর’ আত্মপ্রকাশ করে কিছুদিনের মধ্যেই পাঠকের মনে ছাপ ফেলে দেয়। পরিচ্ছন্ন, ঝকঝকে ছাপা এবং সাবলীল লেখার গুণে পত্রিকাটি পাঠক মনে আলাদা একটি জায়গা করে নিয়েছিল। স্থানীয় পত্র–পত্রিকার জগতে তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
দীর্ঘ প্রায় ২২ বছর চলার পর ২০১৭ সালে বাচস্পতিবাবুর শারীরিক অসুস্থতা ও আর্থিক সংকটের কারণে ছাপাখবর পত্রিকার প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। এহেন একজন সাংবাদিক বন্ধুকে হারিয়ে বিহ্বল হয়ে পড়েন তাঁর গুণমুগ্ধ বন্ধুবান্ধব থেকে সাংবাদিকরা। পরিবারের প্রতি সমবেদনা এবং তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করেছেন সকলেই।
Comments are closed.