বাল্যবিবাহ রোধে সচেতনতা গড়তে গ্রামে গ্রামে ছুটছেন প্রধানশিক্ষক

নিজস্ব সংবাদদাতা: বাল্যবিবাহ রোধে সচেতনতা গড়ে তুলতে প্রচারাভিযানে নামল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনি ব্লকের কলাইমুড়ি নেতাজি সুভাষ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে করোনা আবহে “নিউ নর্মাল” পরিস্থিতিতে অফিস আদালত, দোকানপাট, বাজারহাট খোলা থাকলেও, বিদ্যালয়ের অফিসিয়াল সমস্ত কাজকর্ম নিয়মিত চললেও স্বাভাবিক পঠনপাঠন বন্ধ। স্বাভাবিক জীবনযাপনও অনেকাংশে ব্যাহত হচ্ছে। অনলাইনেক্লাস করার মতো সঙ্গতি যেমন সবার নেই, তেমনি নেই অনলাইনে ক্লাস করার উপযুক্ত পরিকাঠামো। আর এই পরিস্থিতিতে অনেক অভিভাবক আর্থিক সংকটের দোহাই দিয়ে তাঁদের অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছেন।কখনও বা অভিভাবকদের এড়িয়ে নিজেরাই বিয়ে করে নিচ্ছে কম বয়সি মেয়েরা।
এক্ষেত্রে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে তারা যে শুধু সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে তাই নয়, নিজেদের বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অন্যান্য অনেক বিদ্যালয়ের মতো পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনি ব্লকের কলাইমুড়ি নেতাজি সুভাষ বিদ্যালয়ও বাল্যবিবাহ জনিত সমস্যায় জর্জরিত। করোনা আবহের মাঝেই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী-সহ বিদ্যালয়ের বেশকিছু নাবালিকা ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে বলে খবর।বাল্যবিবাহের এই অশনি সংকেত রুখতে বাল্যবিবাহ রোধে বিদ্যালয় পরিচালন সমিতিকে পাশে নিয়ে প্রচার অভিযান শুরু করলেন কলাইমুড়ি নেতাজি সুভাষ বিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত তরুণ প্রধানশিক্ষক সুভাষ জানা। তাঁর উদ্যোগে বিদ্যালয় এলাকার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে শুরু হয়েছে বাল্যবিবাহ রোধে সচেতনতা মূলক প্রচার।বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সদস্য, বিদ্যালয়ের সহকর্মী এবং অতিথি আলোচকদের সঙ্গে নিয়ে গ্রামে গ্রামে প্রচারাভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুভাষবাবু। যেহেতু চাষের কাজ চলছে তাই বেশিরভাগ অভিভাবক-অভিভাবিকদের কাছে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে সুভাষবাবুরা বিকেল ও সন্ধ্যার সময়টাকে বেছে নিয়েছেন প্রচারাভিযানের জন্য। ইতিমধ্যে প্রচার অভিযানের অংশ হিসেবে কলাইমুড়ি, বীরভানপুর, বুড়িশোল, সেরেঙ্গডাঙা, মোহনপুর, ভেলাইডাঙা, শুশুনিয়া, বেনেগেড়িয়া ও শালুকা এলাকার জনগণকে নিয়ে সচেতনতা সভা হয়েছে। এই সচেতনতা সভাগুলিতে সুভাষবাবুর আহ্বানে অতিথি আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কোলাঘাটের কোলা ইউনিয়ন হাইস্কুলের শিক্ষক তথা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মেদিনীপুর ক্যুইজ কেন্দ্র সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক সুজন বেরা, ক্যুইজ কেন্দ্রের সহ-সভাপতি তথা কেশপুরের গড়সেনাপত্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক স্নেহাশিস চৌধুরী, ক্যুইজ কেন্দ্রের সদস্য, রক্তদান আন্দোলনের কর্মী তথা চুয়াডাঙা হাইস্কুলের শিক্ষক সুদীপ কুমার খাঁড়া প্রমুখ।
বাল্যবিবাহ জনিত সমস্যার বিভিন্ন দিক নিয়ে সচেতনতা সভাগুলিতে আলোচনার পাশাপাশি অভিভাবক-অভিভাবিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন আলোচকরা। পাশাপাশি কেন বাল্যবিবাহের মতো ঘটনা ঘটেছে সেগুলোও আলোচনা সভায় উপস্থিত জনতার কাছ থেকে জানার চেষ্টা করেন প্রধানশিক্ষক-সহ অন্যান্য আলোচকরা। প্রধানশিক্ষক সুভাষ জানা বলেন, “আর্থিকভাবে ও শিক্ষাগতভাবে কিছুটা হলেও পিছিয়ে থাকা এই এলাকার মানুষের সচেতনতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেলেও অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার এমনকী বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক অবক্ষয় মূলক কাজ করার প্রবণতা এখনও একশ্রেণির মানুষের মধ্যে আছে। সরকারি প্রচেষ্টা এবং বিদ্যালয়ের নানা কর্মসূচি যেমন নাটক, গান ইত্যাদি পরিবেশনের ফলে বাল্যবিবাহের আনুপাতিক হার কমলেও এখনও অনেক সমস্যা আছে। আমার বিশ্বাস, প্রকৃত শিক্ষা দিয়ে মেয়েদের অধিকার রক্ষার দিকে অচিরেই এগিয়ে নিয়ে যাবো আমরা।”
Comments are closed.