ক্যারাটে খেলোয়াড় পামেলাকে ব্ল্যাকমেল! আত্মহত্যার প্ররোচনায় বর্ধমান থেকে গ্রেফতার যুবক
অনুপ রায়
অশ্লীল ভিডিও ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করে জাতীয় স্তরের ক্যারাটে খেলোয়াড় ১৪ বছরের পামেলা অধিকারীকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয় এক যুবক। পামেলার অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্তে নেমে শেষপর্যন্ত এমনটাই জানতে পারল পুলিশ। অবশেষে ওই যুবককে গ্রেফতার করল তারা। মঙ্গলবার রাতে পূর্ব বর্ধমানের গলসি থানার কুর্মুনা গ্রাম থেকে শেখ তারুফ ওরফে সানি খানকে (১৯)–কে গ্রেফতার করে বালি থানার পুলিশ। বুধবার সানিকে হাওড়া আদালতে তুলে জেল হেফাজতের আবেদন করা হয়।
সানিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, এক বছর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্যারাটে খেলোয়াড়ের সঙ্গে তার আলাপ হয়। সেই আলাপ থেকেই কিছুদিনের মধ্যেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় দু’জনের। প্রেমের সম্পর্কের মধ্যেই সম্প্রতি পামেলা জানতে পারে সানি বিবাহিত। জানার পরই সানির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করতে চায় পামেলা। কিন্তু সানি তাতে রাজি হয়নি। জোর করে সে পামেলার সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চায়। পামেলা ক্রমশও দূরে সরে যাচ্ছে দেখেই সানি তাকে ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করে। দু’জনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সময় পামেলার কিছু অশ্লীল ছবি ও ভিডিও তুলে রাখে সানি।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ৪ জুলাই অভিযুক্ত সানি আরও কিছু অশ্লীল ভিডিও পামেলাকে পাঠাতে বলে। পামেলা তা দিতে রাজি হয়নি। আর তখনই পামেলাকে চূড়ান্ত ব্ল্যাকমেল করে ধৃত। সে পামেলাকে জানায়, নতুন করে অশ্লীল ভিডিও না দিলে আগের ভিডিওগুলি সে তার বাবা-মাকে পাঠিয়ে দেবে। পুলিশ সূত্রে খবর, সানি এভাবে সেদিন বার বার ব্ল্যাকমেল করায় মানসিক চাপ নিতে পারেনি পামেলা। তাই সেদিনই বিকেলে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় সে। সানির গ্রেফতারির পর তার কড়া শাস্তির দাবি তোলে পামেলার পরিবার।
প্রসঙ্গত, গত ৪ জুলাই বিকেলে বালির জি টি রোডের বাড়ি থেকে জাতীয় স্তরের ক্যারাটে খেলোয়াড় পামেলা অধিকারীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। ওই কিশোরীর বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে তাদের একতলা বাড়ির একটি ঘর থেকেই দেহটি পাওয়া যায়।
অষ্টম শ্রেণির এই ছাত্রীর দেহ উদ্ধারের পরই তার বাবা ও মা বালি থানায় অভিযোগ করেন, এক যুবকের সঙ্গে ছবি দেওয়া নেওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়। সেই ঝামেলার জন্যই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় তাঁদের মেয়ে। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে বালি থানা ও হাওড়া সিটি পুলিশের সাইবার থানা। পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি পামেলার মোবাইল ফোনটি নিয়ে সেখান থেকে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে পুলিশ। ফেসবুক ও ফোনের কল রেকর্ড ঘেঁটেই এই মৃত্যুর পিছনে সানির হাত আছে বলে জানতে পারেন তদন্তকারীরা। অবশেষে সানির মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে গলসি থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতের মোবাইল ফোনটিও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
Comments are closed.