শেষরক্ষা হল না, চলেই গেলেন ‘উড়ন্ত শিখ’ মিলখা সিং
সাম্যজিৎ ঘোষ
গোবিন্দপুর গ্রামে তখন পাক সেনাদের তাণ্ডব চলছিল। গ্রামের মানুষদের খুন করছিল পাক সেনারা। ছোট্ট মিলখা সিংকে প্রাণ বাঁচাতে তাঁর বাবা বলে উঠেছিল, ‘ভাগ, মিলখা ভাগ।’ বাবার নির্দেশে নিজের প্রাণ বাঁচাতে সেই দৌড় শুরু করেছিলেন। বাবার সেই সংলাপ থেকেই পরিচালক রাকেশ সিংহ মেহরা ২০১৩ সালে মিলখার বায়োপিক তৈরি করেছিলেন, ‘ভাগ, মিলখা ভাগ।’ মিলখা সিংয়ের জীবন কাহিনি রুপোলি পর্দায় তুলে ধরেছিলেন ফারহান আখতার।
তিন সপ্তাহ আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবারও যেন নিজের প্রাণ বাঁচাতে ‘দৌড়’ শুরু করেছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। শুক্রবার রাত বারোটার পর (শনিবার) মিলখার সব দৌড় থেমে গেল। পাঁচদিন আগেই করোনাতে মৃত্যু হয়েছে মিলখা-পত্নী নির্মলা কৌরের। এবার পত্নীর কাছেই চলে গেলেন ‘উড়ন্ত শিখ’।
চূড়ান্ত ফর্মে থাকার সময় পাকিস্তানে এক বিশেষ দৌড় প্রতিযোগিতায় গিয়ে স্বপ্নের দৌড় দৌড়েছিলেন। পাকিস্তানের সেরা স্প্রিনটার আব্দুল খালেককে হারিয়েছিলেন। তাঁর সেই অবাক করা দৌড় দেখে পাকিস্তানের তৎকালীন মন্ত্রী আয়ুব খান মিলখার নাম দিয়েছিলেন ‘উড়ন্ত শিখ।’ ১৯৬০ সালের ঘটনা। সেদিন মিলখার চমৎকার দৌড়ের সাফল্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করেছিলেন।
মিলখা সিং ভারতকে প্রথম এনে দিয়েছিলেন কমনওয়েলথ গেমসের (১৯৫৮) সোনার পদক। উঠেছিলেন অলিম্পিকের ফাইনালে। অল্পের জন্য অলিম্পিক পদক পাননি। ১৯৫৮ টোকিও এশিয়ান গেমসে ৪০০ মিটার ও ২০০ মিটার দৌড়ে সোনা জিতেছিলেন। ১৯৬২ জাকার্তার এশিয়ান গেমসে ৪০০ মিটার দৌড় ও ৪x৪০০ মিটার রিলেতেও সোনা জিতেছিলেন তিনি। ১৯৫৯ পেয়েছিলেন ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান। এশিয়ান গেমসে ২০০ মিটার ও ৪০০ মিটার দৌড়ে সোনা জিতেছিলেন মিলখা।
দু’দিন আগেই মিলখাকে চণ্ডীগড়ের পিজিআইএমইআর-এর (PGIMER) কোভিড আইসিইউ থেকে সাধারণ আইসিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। কিন্তু ফের মিলখার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। আচমকাই তাঁর জ্বর আসে ও সঙ্গে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে শুরু করে। কোভিড পরবর্তী উপসর্গের জন্যই জীবনের ট্র্যাক থেকে ছিটকে গিলেন মিলখা। ভারতীয় ক্রীড়া জগতে এক বর্ণময় চরিত্রের অবসান হল।
Comments are closed.