Bengal Fast
বিশ্ব মাঝে বাংলা খবর

পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি! রিকশাওয়ালার রোজনামচা

 

অর্পিতা মণ্ডল

রাজ্যজুড়ে বিধিনিষেধের কড়াকড়ি। কমেছে মানুষজনের আনাগোনা। কেউ আর হাঁক দিয়ে গন্তব্যে যেতে বলে না। গত বছরের স্মৃতি উসকে আতঙ্ক ফের গ্রাস করেছে হাতে-টানা রিকশা চালকদের। জীবন-জীবিকা একরকম স্তব্ধ। কবে হাল ফিরবে? কবে ঘুরবে চাকা?

হাড়ভাঙা কষ্টটা বুঝতে পারে না কেউই

রিকশাওয়ালারা বড়ই দুর্ভাগা। কাঠের তৈরি জোয়াল একজোড়া বলদের কাঁধে চাপিয়ে লাঙল বেঁধে দেওয়ার পর নিদারুণ কষ্টটা কেবল বুঝত ওই জোড়া বলদ দুটোই। ঠিক তেমনই ‘এই রিকশা চলো’ বলে বাঙালিবাবু রিকশায় চেপে মহা আনন্দ পান। কিন্তু নিদারুণ কষ্টটা বোঝে কেবল ওই রিকশাওয়ালা। তাঁর কাঁধে চড়ে যান দুজন। অমানবিক ভাবে বাবুদের টেনে নিয়ে যাওয়ার হাড়ভাঙা কষ্টটা বুঝতে পারে না কেউই। তাঁর পরিশ্রমের তুলনায় পারিশ্রমিকটা বড়ই কম।

- Sponsored -

এ শহরে লুপ্ত হয়েও যেন নিজেদের টিকিয়ে রাখার লড়াইটা জারি এঁদের। গলি থেকে রাজপথ– শহরের হৃদপিণ্ড মুঠোবন্দি করে গড়িয়ে চলে চাকা দুটো। পেটের দায়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ছেঁড়া গেঞ্জি-জামা পরে ছুটে চলে কাশী-সুরেশ-মহাবীরদের মতো রিকশাওয়ালারা।

যন্ত্রচালিত দু’চাকা, তিন চাকার যুগে এক কোণায় ঠাঁই হলেও হাতে-টানা রিকশা যেন তিলোত্তমার নস্টালজিয়া। কলকাতার অলিতে-গলিতে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে কিংবা ভরা বর্ষায় জল থই থই রাজপথের জল ভেঙে বাবুদের পৌঁছে দিয়ে যে ক’টা টাকা উপার্জন হয়, তাতে দু’বেলার ভাত বা রুটিটুকু কোনওক্রমে জুটে যায়। এর বেশি আশা করাও যেন ভুলতে বসেছেন এনারা।

নিঃসীম শূন্যতায় চেয়ে থাকা…

রিকশা টেনে কোনওমতে পেট চললেও রুটিরুজিতে থাবা বসিয়েছে করোনা। গতবারের মতো ফাঁকা শহরে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রিকশা। রাস্তায় লোকজন চোখে পড়ছে না তেমন। নেই গন্তব্যে পৌঁছোনোর তাড়া। যে ১০-২০ টাকা হয় এখন, তাতে ঠিকঠাক খাবারটুকুও জোটে না আর। ভাইরাস, সোশ্যাল ডিসট্যান্স, ভ্যাক্সিনেশন ওঁরা এসব বোঝে না। ওসব নিয়ে মাথা ব্যথাও নেই। জানে সরকার কড়াকড়ি তুলে নিলে আবার লোক নিয়ে ছুটব, আবার পেট ভরে খেতে পাব। আপাতত সেদিনের অপেক্ষায়…

 

——————-
অর্পিতা মণ্ডল : সাংবাদিক ও আবৃত্তিকার, ছবি ঋণ : ইন্টারনেট

Subscribe to our Whatsapp Group for daily news alerts.


You might also like

- sponsored -

Comments are closed.