সরকারের প্রস্তাব ফেরালেন কৃষকরা, জোরদার আন্দোলনের ডাক
বীরেন ভট্টাচার্য, নয়াদিল্লি
কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন কৃষি বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত কৃষকরা, পাশাপাশি তাঁদের আন্দোলন আরও জোরদার করার বার্তা দিলেন তাঁরা। রাজধানী দিল্লির সংযুক্ত জাতীয় সড়কগুলি অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও বার্তা দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভরত কৃষকদের তরফে জানানো হয়েছে, এই পর্যায়ের আন্দোলনে দিল্লি-জয়পুর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হবে, রিলায়েন্স মল বয়কট করা হবে, টোল প্লাজাগুলি দখল করে নেওয়া হবে। একইসঙ্গে ১৪ ডিসেম্বর দেশজুড়ে বিক্ষোভ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে।
এদিন দুপুরেই কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি আইনের একাধিক সংশোধন-সহ খসড়া প্রস্তাব পাঠানো হয় কৃষকদের কাছে। যদিও সর্বসম্মতিক্রমে তা খারিজ করে দেন আন্দোলনরত কৃষকরা। আন্দোলনরত কৃষকদের তরফে জানানো হয়েছে, ১২ ডিসেম্বর দেশের টোল প্লাজাগুলি দখল করে নেওয়া হবে, দেশের সমস্ত টোল প্লাজাগুলিকে টোলমুক্ত করা হবে, ১৪ ডিসেম্বর উত্তর ভারতের সমস্ত কৃষকদের দিল্লি আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এছাড়াও সেদিনই দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিজেপির দলীয় কার্যালয়গুলি ঘেরাও করা হবে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। দেশের সমস্ত জায়গার কৃষকদের দিল্লিতে এসে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানান সিঙ্ঘু সীমানায় আন্দোলনরত কৃষকদের এক প্রতিনিধি। ফলে আগামী সপ্তাহেই আন্দোলন জোরদার হওয়ার আশঙ্কায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে প্রশাসন।
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে পাঠানো খসড়া সংশোধনীতে ন্যূনতম বিক্রয়মূল্য বা এমএসপি নিয়ে লিখিত আশ্বাসের কথা বলা হয়েছে। কর্পোরেট সংস্থার সঙ্গে চুক্তিচাষে বিবাদের মীমাংসার ক্ষেত্রে জেলাশাসকের জায়গায় চাষিদের আদালতে যাওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া এবং বিদ্যুৎ সংশোধনী বিলেরও অবলুপ্তি করার উল্লেখ করা হয়েছে খসড়া সংশোধনীতে। কৃষি আইনের যে বিষয়টি কৃষকদের সবথেকে বেশি ভাবিয়ে তুলেছে যে, এর ফলে জমির মালিকানা চলে যাবে কর্পোরেট সংস্থার হাতে, তা নিয়েও খসড়া সংশোধনীতে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনও ক্রেতা কৃষি জমি দেখিয়ে ঋণ নিতে পারবেন না, বা এই ধরনের কোনও শর্ত থাকবে না। কৃষি মাণ্ডির বাইরে যে সমস্ত ব্যবসায়ী ফসল কিনবেন, তাঁদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবে রাজ্য সরকার, এবং মাণ্ডির মতোই সেস বা কর আদায় করতে পারবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের খসড়া প্রস্তাব পৌঁছানোর আগে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন কৃষক নেতারা। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কোনওরকম সংশোধনীতে ভোবি ভুলবে না, একমাত্র আইনটি প্রত্যাহার করলে তবেই আন্দোলন থেকে সরে আসবেন তাঁরা। এর কিছু পরেই খসড়া প্রস্তাব পৌঁছালে তা পত্রপাঠ খারিজ করে দেন কৃষকরা। তাঁদের তরফে এক নেতা বলেন, “আমরা এই আইনের কোনওরকম সংশোধনী চাই না, আমাদের দাবি, পুরো আইনটিই প্রত্যাহার করতে হবে।”
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন কৃষক নেতারা। সেখানেও অনড় থাকে দু’পক্ষই। একদিকে, আইন প্রত্যাহারের দাবি জোরদার করেন কৃষকরা, অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সংশোধনীর প্রস্তাব দেওয়া হয়। ফলে কার্যত ষষ্ঠ দফার বৈঠকও ভেস্তে যায়। কয়েকটি কৃষক সংগঠনের অভিযোগ, গ্রিন স্টোরেজ তৈরি করছে আদানি গ্রুপ এবং চাষিদের থেকে ফসল কিনে পরে তা উচ্চদামে বিক্রি করে মুনাফা লুটবে তারা।
আম্বানি ও আদানি গ্রুপের সুবিধা করে দিতেই তারা চাষিদের থেকে তাঁদের ফসল বিক্রির অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে বলে অভিযোগ আন্দোলনরত কৃষকদের। যদিও আদানি গ্রুপের তরফে জানানো হয়েছে, কৃষকদের থেকে ফসল কিনবে না তারা, শুধুমাত্র এফসিআইয়ের জন্যই স্টোরেজের ব্যবস্থা করা হবে তাদের তরফে।
এদিকে, কৃষি বিল নিয়ে কৃষকদের আন্দোলনের দাবিদাওয়া মেনে নেওয়ার দাবি জানিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করলেন বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা। উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের রাহুল গান্ধি, সিপিআইএমের সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআইয়ের ডি রাজা, এনসিপির শরদ পাওয়ার, ডিএমকের টিকেএস এলানগোভানের মতো বিজেপি বিরোধী নেতারা। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সাক্ষাতে বিরোধী নেতাদের তরফে দেওয়া স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কৃষি বিলটি “যথাযথ আলোচনা এবং পরামর্শ ছাড়া” পাস করানো হয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর বলেন, “আইনটি যদি কৃষকদের স্বার্থেই হয়ে থাকে, তাহলে তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন কেন?” সীতারাম ইয়েচুরির কথায়, “আমরা রাষ্ট্রপতিকে একটি স্মারকলিপি দিয়েছি। আমরা, যথাযথ আলোচনা এবং উপযুক্ত পরামর্শ ছাড়া পাস করানো কৃষি আইন এবং বিদ্যুৎ সংশোধনী আইনটি প্রত্যাহার করতে বলেছি।”
Comments are closed.