করোনা কালে স্তন ক্যানসার নিয়ে মহিলাদের সচেতনতায় জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা
রূপম চট্টোপাধ্যায়
বর্তমান করোনার প্রকোপে কোমর্বিডিটির কারণে মৃত্যুর হার অনেকটাই বেশি। আর এই কোমর্বিডিটির কারণে কোভিডে মৃতদের এক বড় অংশই ক্যানসার রোগী। তাই ক্যানসার রোগীদের অতিরিক্ত সতর্কতার উপর জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। গত অক্টোবর মাসটি ছিল “ব্রেস্ট ক্যানসার সচেতনতা মাস”। আজকের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রাথমিক পর্যায়ে জানা গেলে ব্রেস্ট ক্যানসারকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তাই শুধু একটি মাস নয়, বছরভর ব্রেস্ট ক্যানসার নিয়ে মহিলাদের সচেতন রাখা জরুরি বলে মনে করছেন চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট ( সিএনসিআই)-এর অধিকর্তা সার্জিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট ডা. জয়ন্ত চক্রবর্তী ।
তথ্য বলছে, বিশ্বে প্রতি বছর ব্রেস্ট ক্যানসারের কবলে পড়ে প্রায় ২১ লক্ষ মানুষ। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না করতে পারার কারণে মৃত্যু হয় গড়ে ৬ লক্ষ ২৭ হাজার রোগীর। তাই মহিলাদের এই বিষয়টি নিয়ে ধারণা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। ব্রেস্ট ক্যানসার নিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রথম সচেতনতার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন ক্যানসার রোগী অস্ট্রিয়ান-আমেরিকান ইভিলিন লাউন্ডার। আজ থেকে ২৫ বছর আগে তিনি ব্রেস্ট ক্যানসার সূচক পিঙ্ক রিবনের প্রচলন করেন। ২০১১ সালের ১২ নভেম্বর ওভারিয়ান ক্যানসারে তাঁর মৃত্যু হয়। তারপর থেকে পৃথিবী জুড়ে সচেতনতার এই আন্দোলনকে বাঁচিয়ে রাখতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসারের উদ্যোগে প্রতি বছর অক্টোবর মাসকে স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস হিসাবে পালন করা হয়। মানুষ আগের থেকে অনেক সচেতন হলেও এখনও বহু মানুষের বিশেষ করে মহিলাদের বিষয়টি নিয়ে সম্যক ধারণা নেই । বর্তমান করোনাকালে চিকিৎসকরা ক্যানসার সচেতনতায় আরো বেশি গুরুত্ব আরোপ করছেন। ব্রেস্ট ক্যানসারের রিস্ক ফ্যাক্টর ও লক্ষণ সম্পর্কে ডাঃ জয়ন্ত চক্রবর্তী জানিয়েছেন।
ব্রেস্ট ক্যানসার পুরুষদের মধ্যে দেখা গেলেও মহিলারাই এই অসুখে বেশি আক্রান্ত হন। তাই মহিলাদের ঝুঁকিটা তুলনায় অনেক বেশি। বর্তমানে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া দেরিতে বিয়ে, অবিবাহিত বা নিঃসন্তান মহিলাদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি। অল্প বয়সে পিরিয়ড শুরু হলে বা বেশি বয়সে মেনোপজ হলে দীর্ঘদিন শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেশি থাকে। এই হরোমন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। সন্তানকে ব্রেস্ট ফিডিং না করালে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
এরই সঙ্গে তৈলাক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড , অতিরিক্ত কারবো হাইড্রেড খেলে ওজন বাড়ে। বাড়তি ওজন ব্রেস্ট ক্যানসারের অন্যতম কারণ। ধূমপান, মদ্যপান অন্য সমস্যার সঙ্গে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। মা, দিদি, পিসি, মাসির ব্রেস্ট বা ওভারি ক্যানসার থাকলে ঝুঁকি বাড়ে। সে সব ক্ষেত্রে জেনেটিক টেস্ট করে নিলে ভাল। ডা. চক্রবর্তী প্রাথমিক উপসর্গ নিয়েও সাবধান বাণী শুনিয়েছেন। স্তনে কোনও ব্যথাহীন ফোলা অংশ আছে বুঝলেই ডাক্তার দেখান। স্তনের ত্বকের কোনও অংশ পুরু হয়ে গেলে সাবধান হোন।
লালচে বা ঈষৎ কমলা রঙের ত্বক দেখলে ব্রেস্ট ক্যানসারের সম্ভাবনার কথা ভাবতে হবে। নিপিলের গঠন বদলে গেল বা কোনো ডিসচার্জ হলে অবিলম্বে ডাক্তার দেখান। যেকোনও ক্যানসারের একটা উল্লেখযোগ্য উপসর্গ হল ওজন কমে যাওয়া। বয়স ৩০ পেরোলেই নিয়মিত ব্রেস্ট পরীক্ষা করা ও কোনও অস্বাভাবিকতা দেখতেই চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
এখন স্তন ক্যানসার প্রাথমিক স্তরে ধরা পড়লে ৯৯ শতাংশ সম্পূর্ণ সেরে যায়। এক্ষেত্রে আধুনিক সার্জারির একটা বড় ভূমিকা আছে বলে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন।
Comments are closed.