“দিল্লি চলো” স্লোগান আর মিছিলে উত্তপ্ত দিল্লি-হরিয়ানা সীমানা, নাজেহাল পুলিশ
বীরেন ভট্টাচার্য, নয়াদিল্লি
ব্রিটিশ পুলিশের বিরুদ্ধে আজাদ হিন্দ বাহিনীর নয়, নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত কৃষকদের দিল্লি চলো স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে উঠল দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্ত। পুলিশের সঙ্গে রীতিমতো ধস্তাধস্তি, ইটবৃষ্টিতে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল সীমানা সংলগ্ন সেতু। কৃষকদের আটকাতে আড়াড়িভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা ট্রাক নিয়ে চলল কৃষক ও পুলিশের টানাটানি। তবে শেষরক্ষা হল না। হরিয়ানা সীমানায় ঢুকে পড়লেন বিক্ষোভরত কৃষকরা।
বৃহস্পতিবার সকালে হরিয়ানা সীমানা সংলগ্ন একটি সেতুর কাছে পৌঁছায় বিক্ষোভকারীরা। সেখানে সেতুর মধ্যে কৃষকদের আটকে দিতে একটি ট্রাক আড়াআড়িভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় পুলিশের তরফে। একইসঙ্গে ব্যারিকেড ও প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়। যদিও বিক্ষোভকারীরা বাধা পেতেই ব্যারিকেড ছুড়়ে ফেলে দেয় এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি করতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাল্টা পদক্ষেপ করে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের হটাতে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটানো হয়, যদিও তাঁদের আটকানো যায়নি। সেতুর মাঝেই আটকে থাকা অবস্থায় স্লোগান দিতে থাকেন কৃষক সংগঠনের সদস্যরা। জিন্দ-পাতিয়ালা জাতীয় সড়কে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করারও অভিযোগ ওঠে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, এদিন সীমানা পেরিয়ে দিল্লি ঢোকার চেষ্টা করলে গুরগাঁওতে যোগেন্দ্র যাদব এবং ৫০ জন কৃষককে আটক করা হয়।
সংবিধান দিবসের দিনেই দু’মাস ধরে কৃষক বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয় ৬ রাজ্য উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, কেরল, পঞ্জাবের কৃষকরা। এদিনের বিক্ষোভকারী এবং সংঘর্ষের মূলে ছিলেন পঞ্জাবের কৃষকরাই। গত দু’মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। দিন যতই এগিয়েছে পঞ্জাবে কৃষকদের বিক্ষোভ জোরদার হয়েছে। এমনকী, তীব্র বিক্ষোভের জেরে সেখানে রেল পরিষেবাও বিঘ্নিত হয়েছে। প্রচুর ট্রেনের যাত্রাপথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সীমানায় মোতায়েন করা হয়েছে প্রচুর সংখ্যক পুলিশ। তবে শুধুমাত্র পঞ্জাবই নয়, বিক্ষোভ হয়েছে কেরলও। সেখানেও কেন্দ্রীয় সরকারের আনা নয়া কৃষি বিল এবং শ্রম বিলের বিরুদ্ধে পথে নেমে প্রতিবাদ জানানো হয়।
বাদল অধিবেশনে সংসদে পাস হয় কৃষি বিল। তারপর থেকেই আন্দোলন জোরদার হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে, যার সামনের সারিতে পঞ্জাবের কৃষকরা। তাঁদের অভিযোগ, এই বিলের ফলে একদিকে যেমন কৃষকদের আয় কমবে, তেমনই বাড়বে মজুদদারদের দাপট। সংসদের ভিতরে-বাইরে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। বাদল অধিবেশন চলাকালীনই প্রথমে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন শিরোমণি অকালি দলের সাংসদ হরসিমরৎ কউর বাদল। যদিও তাতেও চিঁড়ে বেজেনি। কংগ্রেস এবং অন্যান্য দলের তরফে এনডিএ ছাড়ার দাবি জানানো হয়। প্রবল চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে যায় শিরোমণি আকালি দল।
কৃষকদের বিক্ষোভ নিয়ে রাজনীতিও হয়েছে। কৃষকদের আটকানোর জন্য হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং। ট্যুইটারে কৃষকদের বিক্ষোভকে সমর্থন জানিয়ে ট্যুইট করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি।
বৃহস্পতিবার সীমানা সংলগ্ন এলাকায় পরিষেবা বন্ধ রাখে দিল্লি মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। শুক্রবারও পরিস্থিতি একই থাকলে সেরকই সিদ্ধান্ত নিতে পারে তারা। সব মিলিয়ে নভেম্বরে দিল্লি সীমানায় উত্তাপ বাড়াল কৃষকদের বিক্ষোভ।
Comments are closed.