১০০ বছরের বেশি সময় ধরে পাত্রবাড়িতে পূজিতা মা দক্ষিণাকালী
শুভাশিস মণ্ডল
হাওড়ার সাঁতরাগাছির মন্দিরপাড়ার পাত্রবাড়িতে ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে পূজিতা হচ্ছেন মা দক্ষিণাকালী। মা এখানে ধীরস্থিতা, গৃহময়ী। কথিত আছে, অবিভক্ত মেদিনীপুরের স্বর্গীয় প্রভাস চন্দ্র পাত্র ও সহধর্মিনী যমুনাবালা পাত্র সাঁতরাগাছির জন্মলগ্ন থেকে এই এলাকায় চাষাবাদের কাজে লিপ্ত ছিল। ছয় সন্তানের পিতামাতা প্রভাস-যমুনার টানাপোড়েনের সংসারে মেদিনীপুরের দাসপুরের কুলপুরোহিত হিমাংশু রাজপণ্ডিত মা দক্ষিণাকালীকে নিয়ে আসেন সাঁতরাগাছিতে পাত্রবাড়ির ভিটেয়। প্রতিষ্ঠা করেন জগন্ময়ীকে। মন্দির ঘেঁষা একটি নিমগাছের নীচে বসে তন্ত্রসাধনা করতেন তৎকালীন কুলপুরোহিত হিমাংশু। স্বপ্নাদেশে মা তাঁকে জানান দেয় এই স্থানেই তিনি নিত্য পূজিত হবেন। এমনকী মায়ের অধিষ্ঠানের পাশেই যে নিমগাছ আছে তাতে ব্রহ্মদত্যি বাঁধা আছে বলেও জানান দেয় মা দক্ষিণাকালী। জনশ্রুতি, শত বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি মায়ের নিত্যপুজো। প্রতিদিন মা পূজিতা হন এখানে। বলা ভাল, মা পুজো নেন তাঁর ভক্তকুলদের থেকে।
প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় বড় করে পূজা-আচ্চা হয় পাত্রবাড়িতে। মা দক্ষিণাকালী রোদ-জল-বৃষ্টিতে টালির চালার নীচে পূজিতা হতেন দীর্ঘদিন। একটা সময় বাড়ির বড়পুত্র সেবায়েত রণজিৎ কুমার পাত্রের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মা দক্ষিণাকালীর মন্দির পুরোপুরি পাকাপাকি ভাবে তৈরি হয়। প্রতিবছর এলাকার সকল বাসিন্দারা মায়ের প্রসাদ গ্রহণ করতে ভিড় করেন এই পাত্রবাড়িতে। এলাহি আয়োজনে তা এখনও বহমান। পরবর্তীতে বাড়ির ছোটপুত্র সেবায়েত অশোক পাত্র মায়ের মূর্তি রাজস্থানের জয়পুর থেকে তৈরি করে আনেন। প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় পরিবারের বড় কন্যার নিত্যপুজোয় ভরও পড়ে। ভক্তরা দণ্ডি কেটে মানত করেন মায়ের কাছে।
বর্তমান কুলপুরোহিত প্রিয়ব্রত মুখার্জির কথায়, ‘পাত্রবাড়ির মা দক্ষিণাকালীর কাছে মানত করেন এলাকার বাসিন্দারা। নিমগাছে সুতো বেঁধে মানত করা হয়। মা সবার ইচ্ছাই পূরণ করেন। মায়ের পুজোয় আসলে এখান থেকে কেউই খালি পেটে যেতে পারেন না। মায়ের ভোগ তাঁকে নিতেই হবে। এমনই মায়ের মাহাত্ম্য।’
বর্তমানে পাত্রবাড়ির সেবায়েত সত্যজিৎ পাত্র, শুভজিৎ পাত্র ও দীপালি পাত্র ঐতিহ্যময়ী মা দক্ষিণাকালীর পুজো নিষ্ঠাভরে করে চলেছেন। জমজমাটি আবহে দূর দূরান্ত থেকে মানুষজন হাজির হন এখানে। সেবায়েত শুভজিৎ পাত্রের কথায়, ‘করোনা আবহে জনসমাগম এ বছর কম হবে। তবে সামাজিকবিধি মেনে মায়ের পুজো পুরো নিষ্ঠাভরেই করা হবে।’ পাত্রবাড়ির এই দক্ষিণাকালী মন্দিরে যে কোনও সময় ভক্তরা মনস্কামনা নিয়ে পুজো দিতে পারেন।
Comments are closed.