মানিকতলা খালপাড়ের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়ার ঘর ভেঙে দেওয়ার প্রতিবাদে বাসিন্দারা
রূপম চট্টোপাধ্যায়
পূর্ব কলকাতার বাগমারী ব্রিজ সংলগ্ন মানিকতলা খালপাড়ের শিশুদের জন্য ২০১৬ সাল থেকে পাঠশালা চালাচ্ছে ‘ভাষা ও চেতনা সমিতি’। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই শিশুদের অনলাইন পড়াশোনা ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্য যে ঘরটি তৈরি হচ্ছিল তা ভেঙে দেয় স্থানীয় মস্তান ছোট্টু ও তার এক পাতাখোর সাগরেদ। এর প্রতিবাদে খালপাড়ের বাসিন্দারা যাঁদের মধ্যে এক বড় অংশ মহিলা, জায়গাটি ঘিরে ধরে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
অধ্যাপক ইমানুল হকের নেতৃত্বে ২০১৬ সালে মাত্র ২০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে নিয়ে শুরু হয়েছিল এই পাঠশালা । আজ ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২১১ জন। এদের বই, খাতা, খাবার, পোশাক সবই দেওয়া হয় বিনামূল্যে। তাই কেউ মাঝপথে পড়া ছেড়ে দেয় না। অর্থাৎ ড্রপ-আউটের সংখ্যা শূন্য। বর্তমান বছরে এই খালপাড়েরই একটি মেয়ে মাধ্যমিক পাস করেছে। এর আগে একজন স্টার নিয়ে পাস করে এখন কলেজে অনার্স নিয়ে পড়ছে। খালপাড় বাসিন্দাদের ৮০ শতাংশ মানুষ আজ মদ ছোঁয় না। বন্ধ হয়েছে বাল্যবিবাহও। এক কথায় ‘ভাষা ও চেতনা সমিতি’ এই মানিকতলা খালপাড় এলাকায় একটা নজরকাড়া পরিবর্তনের সূচনা করেছে।
এই অঞ্চলে গরিব শ্রমজীবী মানুষের বাস। সেখানে হিন্দু-মুসলিম, বাঙালি, বিহারী, ওড়িয়া সব ভাষা ও সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করছে। সকলেই এই পরিবর্তনের শরিক।
এই কোভিডজনিত পরিস্থিতিতে রাস্তার ধারে সকলকে এক সঙ্গে বসিয়ে ক্লাস করানো সম্ভব নয়। তাই একটি ঘর তৈরি করে ক্লাস অনুযায়ী ভাগ করে অনলাইনে ক্লাস করানোর উদ্যোগ নিয়েছিল সমিতি। কিন্তু যেখানে ঘরটি হচ্ছিল তার পিছনেই চলে মদের বেআইনি ব্যবসা। ক্লাস শুরু হলে পাছে সেই ব্যবসায় ব্যাঘাত ঘটে, তাই ঘর ভেঙে এলাকার নিয়ন্ত্রণ কায়েম রাখতেই এই হামলা বলে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ।
এর আগে ২০০১ সালেও একবার এই বাসিন্দাদের উৎখাতের চেষ্টা হয়েছিল। স্থানীয় মানুষের প্রতিরোধে তা ব্যর্থ হয়। এই খালপাড়েই আছে একটি ফুটপাথ লাইব্রেরি । যার উদ্বোধন করেছিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। সব মিলিয়ে এটি একটি অভিনব প্রচেষ্টা। যা খালপাড়বাসীদের একান্ত প্রয়োজনে পুষ্ট হয়ে উঠেছে। তাই বার বার দল পাল্টে সমাজ বিরোধীরা তাদের ক্ষুদ্র স্বার্থে এই উদ্যোগ ভেস্তে দিতে তৎপরতা চালাচ্ছে। শুক্রবার বিকেলেও খালপাড়বাসী মহিলা, পুরুষ, কিশোর, কিশোরীদের জমায়েত ছিল এই তৎপতার বিরুদ্ধে। এদিন আরও একবার জানিয়ে দিলেন, যে আলোর সন্ধান তাঁরা পেয়েছেন, যে কোনও মূল্যে তাকে তাঁরা জ্বালিয়ে রাখবেন।
Comments are closed.