Bengal Fast
বিশ্ব মাঝে বাংলা খবর

হাতরাসে দলিত কন্যার ধর্ষণে বিজেপির নৈতিক সমর্থন নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

রূপম চট্টোপাধ্যায়

দেশজুড়ে নারী ধর্ষণের ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। পশ্চিমবঙ্গও পিছিয়ে নেই। তবে বিজেপির মডেল রাজ্য উত্তরপ্রদেশের হাতরাসে সম্প্রতি ১৯ বছরের দলিত কন্যাকে যেভাবে ধর্ষণ করে শিরদাঁড়া ভেঙে, জিভ কেটে  অত্যাচার করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হল, তা গোটা দেশকেই প্রবল ভাবে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তবে একই সঙ্গে বিস্মিত করেছে এই নৃশংস হত্যা ও ধর্ষণে যুক্ত উচ্চশ্রেণির ৪ ব্যক্তিকে যোগী সরকারের আড়াল করার চেষ্টায়। তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এডিজি ধর্ষকদের বাঁচাতে ‘ধর্ষণ’ হয়নি বলে ঘোষণা করে দিল। অন্যদিকে ধর্ষিতার পরিবারকে আটকে রেখে পুড়িয়ে দেওয়া হল ধর্ষিতার মৃতদেহ। স্বয়ং জেলাশাসক নিজে ধর্ষিতার পরিবারকে হুমকি দিয়েছিল “মুখ খুললে কোনও টাকা দেওয়া হবে না।”

কলেজ স্ট্রিট থেকে ধিক্কার মিছিল ছাত্রছাত্রীদের

ধর্ষিতার মৃত্যুকালীন জবানবন্দিকে তোয়াক্কা না করা এবং অপরাধ আইনের ৩৭৬ ধারা, যেখানে কোনও মহিলার অসম্মতিতে তাঁর অঙ্গ স্পর্শ করলেই ধর্ষণের অভিযোগ গ্রহণযোগ্য, সেখানে ধর্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিজেপি নেতৃত্বের ধর্ষকের পাশে দাঁড়ানোর ঘটনায় দেশজুড়ে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তরা উল্লাস প্রকাশ করছে বলে আইনজীবী মহলের দাবি। তাই এর প্রতিবাদে দেশের নানা প্রান্তে আজও বহু মানুষ পথে নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

আজ সন্ধ্যায় কলকাতার কলেজ স্ট্রিট থেকে ধিক্কার মিছিল করে প্রেসিডেন্সি, যাদবপুর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরা। সত্যেন্দ্র সিং-সহ বিজেপি নেতারা এই ধর্ষণ ও খুনের জন্য ওই ১৯ বছরের ধর্ষিতাকেই দায়ী করেছে। এর সঙ্গে ভারতীয় নারীরা সহবত না শিখলে এই ধরনের ধর্ষণ যে চলতেই থাকবে তাও মনে করিয়ে দিয়েছেন বিজেপি নেতারা। ধর্ষকদের আড়াল করা, মৃতার দেহ পুড়িয়ে দিয়ে প্রমাণ লোপের চেষ্টা, সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার আপ্রাণ চেষ্টা ইত্যাদি সত্বেও শেষরক্ষা হয়নি।

- Sponsored -

মানুষ প্রথম জেনেছে এই নৃশংস ঘটনাটি, তারপর আরও একবার চিনেছে এই মনুবাদী হিন্দুত্ববাদী বিজেপি দলটিকে এমনই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে দেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও ধর্ম নিরপেক্ষ শক্তি। ধর্ষণের ঘটনায় সব শাসকরাই প্রাথমিকভাবে অস্বস্তি এড়াতে ঘটনাকে চেপে যাওয়ার বা লঘু করে দেখার চেষ্টা করে। কলকাতার পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণকাণ্ডে বা কাটোয়ার ধর্ষণের ঘটনায় মমতা ব্যানার্জিও বিষয়টিকে লঘু করার চেষ্টা করেছিলেন। যেমন বানতলায় নারী নির্যাতনের ঘটনায় জ্যোতি বসুর প্রতিক্রিয়া ছিল “এমনতো কতই হয়”। তবে পরে দুষ্কৃতীদের আড়াল করার চেষ্টা তিনি করেননি।

কলেজ স্ট্রিট থেকে ধিক্কার মিছিল ছাত্রছাত্রীদের

মমতাও পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণে দময়ন্তী সেনকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। দময়ন্তীর অপরাধ তিনি পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণকে ছোট ঘটনা বলতে রাজি ছিলেন না। কামদুনি ধর্ষণকাণ্ডেও মমতা স্থানীয় প্রতিবাদীদের মাওবাদী আখ্যা দিয়ে দিয়ে দমন করতে চেয়েছিল। এটা একটা শাসকীয় আচরণ। সকলেই কমবেশি এই দোষে দুষ্ট। কিন্তু দু’ সপ্তাহের মধ্যে হাতরাস, এরপর বলরামপুরে ২২ বছরের কলেজ ছাত্রী এবং ভাদহীতে ১৪ বছরের নাবালিকাকে যৌন অত্যাচারের পর ইট দিয়ে থেতলে খুন করার ঘটনায় বিজেপি উল্লসিত হলেও দেশের সাধারণ মানুষ তাদের ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন।

এ রাজ্যের প্রশাসনও উত্তরবঙ্গের দিনাজপুরের দুটি ধর্ষণের ঘটনায় সক্রিয় হয়েছে। অন্য সমস্ত অপরাধের পক্ষে অনেক সময়ই যুক্তি খাঁড়া করতে শাসকদের তৎপর হতে দেখা যায়। কিন্তু ধর্ষণের ক্ষেত্রে খোলাখুলি শাসকদলগুলি এগিয়ে আসতে একটু ইতস্তত করে। বেনিয়া বিজেপি দেশের সব সম্পদের সঙ্গে নিজেদের লাজলজ্জা সম্ভ্রমও বিক্রি করে দিচ্ছে বলে সরব হয়েছেন দেশের নানা প্রান্তের মহিলারাও।

উত্তরপ্রদেশের হাথরসের ঘটনা নিয়ে গতকাল উত্তরপাড়ার গৌরীতে একটি প্রতিবাদ সভা হয়েছে। একই সঙ্গে কৃষিবিল, ফ্যাসিবাদ, এলগার পরিষদ– এগুলিও মুখ্য হয়ে উঠে আসে প্রতিবাদ সভায়।  পাশাপাশি ১২ অক্টোবর, সোমবার উত্তরপাড়ার সখের বাজার থেকে একটি মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে এই সভা থেকেই। বিকাল ৫-৩০ টায় শুরু হওয়া এই মিছিল যাবে মাখলা পর্যন্ত।

Subscribe to our Whatsapp Group for daily news alerts.


You might also like

- sponsored -

Comments are closed.