ভারতীয় সিনেমার এভারগ্রিন সুপারস্টার দেব আনন্দ

সুদীপ চট্টোপাধ্যায়
চার্জগেটের এক মিলিটারি অফিসার থেকে তিনি হয়েছিলেন ভারতীয় সিনেমার গ্রেগরি পেক। ফিল্মি কেরিয়ারের নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজও তিনি চির নতুন, চির নবীন সদাহাস্য এক সুপারস্টার… তিনি দেব আনন্দ (Dev Anand)। আজ তাঁর ৯৮তম জন্মদিন। ১৯২৩ সালের আজকের দিনে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে জন্ম হয় ধরমদেব পিশোরিমাল আনন্দের। যিনি পরবর্তীকালে খ্যাত হয়ে ওঠেন দেব আনন্দ বা দেব সাহাব নামে।
লাহোরের এক গর্ভমেন্ট কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক হওয়ার পর বোম্বে (মুম্বই) পাড়ি জমান ধরম দেব আনন্দ। ১৯৪৬ সালে তাঁর ডেবিউ ছবি ‘হাম এক’ মুক্তি পায়। এই ছবির পর তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে কিংবদন্তি অভিনেতা গুরু দত্তের সঙ্গে। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি অভিনেতা দেব আনন্দকে। চল্লিশের দশকের শেষে দেবানন্দের জীবনে আসে অভিনেতা-কাম-গায়িকা সুরাইয়া। বলিউডের এই রোমান্টিক জুটির পরপর ৬টি ছবি সুপার ডুপার হিট। এরপর ১৯৪৮ সালে দেব আনন্দ তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা ব্রেক পান ‘জিদ্দি’ ছবির হাত ধরে। এই ছবির জনপ্রিয়তা তাঁকে রাতারাতি খ্যাতির শিখরে নিয়ে যায়। দেব আনন্দ থেকে তিনি হয়ে ওঠেন সকলের আদরের দেব সাহাব।
এরপর ‘বাজি’, ‘পকেটমার’, ‘সিআইডি’, ‘পেয়িং গেস্ট’, ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’ প্রভৃতি ছবির সাফল্য তাঁকে ছয়ের দশকের বলিউডের স্টাইল আইকনে পরিণত করেছিল। মাথায় টুপি, গলায় সিল্কের স্কার্ফ সেসময় টিনসেল টাউনের ইয়ং এজের স্টাইল হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
ভাই বিজয় আনন্দ পরিচালিত ‘গাইড’ থেকে ‘জুয়েল থিফ’, এমনকী নবাগতা জিনাত আমনের সঙ্গে ‘হরে রামা হরে কৃষ্ণা’ ছবিতে তাঁর অসামান্য অভিনয় আজও বলিউডের দর্শককের মণিকোঠায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। শুধু সমবয়সি নয়, সব বয়সের নায়িকার সঙ্গে অনস্ক্রিন রসায়নে তিনি ছিলেন সাবলীল ও সপ্রতিভ। তাই তো তিনি ছিলেন বলিউড এভারগ্রিন এক নায়ক।
তবে শুধু অভিনেতাই নয়, ক্যামেরার পিছনেও তাঁর ভূমিকা ছিল অনবদ্য। সারা জীবনে অভিনয়ের পাশাপাশি ৩০টির বেশি ছবিতে প্রযোজকের গুরু দায়িত্ব সামলেছেন এবং অন্যদিকে মোট ১৯টি ছবি পরিচালনাও করেছেন তিনি। তাঁর পরিচালিত হিট ছবিগুলির মধ্যে অন্যতম ‘হরে রামা হরে কৃষ্ণা’, ‘প্রেম পূজারি’, ‘আওয়াল নম্বর’, ‘স্বামী দাদা’ প্রভৃতি।
দেশ-বিদেশের নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। পেয়েছেন অসংখ্য সম্মানও। ২০০১-এ ভারত সরকার তাঁর হাতে তুলে দিয়েছে পদ্মভূষণ এবং ২০০২-এ তিনি লাভ করেন ভারতীয় সিনেমার শ্রেষ্ঠ শিরোপা ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কার।
২০১১ সালের ৩রা ডিসেম্বর সুদূর লন্ডনের ওয়াশিংটন মেফেয়ার হোটেলে ৮৮ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ফিল্মি দুনিয়ার মায়া কাটিয়ে চির ঘুমের দেশে চলে যান আমাদের সকলের প্রিয় মহান এই অভিনেতা। আজ তাঁর মৃত্যুর এত বছর পরেও তিনি আজও বেঁচে আছেন আমাদের মধ্যে, আমাদের মাঝে এক চিরনবীন তারা হিসেবেই। আর এটাই বোধহয় এভারগ্রিন দেব সাহাবের ক্যারিশমা।
Comments are closed.